tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
সারাদেশ প্রকাশনার সময়: ২৬ অগাস্ট ২০২৪, ১৮:৩৮ পিএম

মিয়ানমারে কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা


image_115385_1724642290

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর দমনপীড়নের মধ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজারে আসার সাত বছর পেরিয়ে গেছে গতকাল (রোববার)।


২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে তিন লাখসহ বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাস করছে। কবে তারা স্বদেশে ফিরবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে সরকারের শরণার্থীবিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে ২০১৭ সালে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন চালালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই বছরের ২৫ আগস্টের পর দু-তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তাদের খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।

২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।

রোহিঙ্গারা মনে করে, তাদের নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা-জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে প্রবেশ করে রোহিঙ্গারা ২৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ হামিদ বলেন, দেখতে দেখতে আজ বাংলাদেশে এসেছি সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ আমাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখনও কেউ সুরাহা দিতে পারেননি। আর কতদিন বাংলাদেশে থাকতে হবে জানি না।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা টেকনাফ ২৬নং নয়াপাড়া ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, রোহিঙ্গারা কবে দেশে ফিরবে জানা নেই। আজ আমরা সাত বছরপূর্তি উপলক্ষে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেছি। এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে স্বদেশে ফিরতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন সে উদ্যোগ নেয়।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, ছোট এই বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা দিন দিন বোঝা হয়ে যাচ্ছে। তাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ, যে কোনো উপায়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক এই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হোক।

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, আজ রোহিঙ্গা আগমনের সাত বছর পেরিয়ে আট বছরে পদার্পণ করবে। আজ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের মতো করে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা শিশুদের চিত্রাঙ্কন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা রয়েছে।

তিনি বলেন, রাখাইনে এখন যুদ্ধ চলছে। সেখানকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। ওখানকার যুদ্ধের গোলাবারুদের শব্দে এপারের মানুষ পর্যন্ত ভয়ে তটস্থ। কবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে সে তথ্য আমার কাছে নেই। অবশ্য, নতুন করে যাতে আর কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সীমান্তে বিজিবি শক্ত অবস্থানে আছে।

এদিকে প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্র ও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রত্যাশা স্থানীয় জনসাধারণের।

এনএইচ