আ’লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দলীয় সম্পদ বানিয়ে মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে : ড.মাসুদ
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতা পরবর্তী দলীয় সম্পদ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে।’
মুক্তিযোদ্ধারা কোনো একক দলের সম্পদ নয়, মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় সম্পদ ।
শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী পূর্ব থানা জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর কেউ কেউ শহীদদের নিজ দলের কর্মী হিসেবে দাবি করছে। নিজ দলের শহীদের সংখ্যা ঘোষণা করছে। অবশ্য আহতদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব দলের ওপর পড়তে পারে। জামায়াতে ইসলামী জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে শহীদদের জামায়াত-শিবির হিসেবে দলীয় পরিচয় দেয়নি, দিতে চায় না। আমরা মনে করি, এই আন্দোলনে সকল শহীদ ও আহতরা জাতীয় বীর, জাতীয় সম্পদ। তাদেরকে দলীয় কর্মী হিসেবে দেখলে জাতির কাছে তাদের মর্যাদা সীমিত হয়ে যাবে। আমরা চাই জাতীয় বীর, জাতীয় বীরের সম্মানেই থাকুক।’
ড. মাসুদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশের ১০০ দিনের অর্জন ও ব্যর্থতা নিয়ে কেউ কেউ আলোচনা করছে। আমি বলবো, বিপ্লব পরবর্তী গত তিন মাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আওয়ামী দোসরদের উৎখাত করা যায়নি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরের খুটি অনেক গভীর ও শক্তিশালী। এদের তালিকা করে সমূলে উৎখাত করতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অর্জিত বিপ্লবের পর এখন দেখা যায়, কেউ কেউ সভা সমাবেশ করেন কিন্তু মঞ্চে কে নেতা, কে কর্মী বুঝা যায় না। প্রধান অতিথি বক্তব্য দিতে গেলে তার চারপাশে কর্মীরা এমনভাবে তাকে ঘিরে দাঁড়ায় প্রধান অতিথি কে সেটাও বুঝা যায় না। পরে প্রধান অতিথির চেহারার ওপর টিক চিহ্ন দিয়ে ওই ছবি পোস্ট করে! তারা কোনোভাবে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না। যাদের নিজ ঘরে, নিজ দলে শৃঙ্খলা নাই, তারা রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না। তারা ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।
ক্ষমতা দখল করেই দুর্বার গতিতে লুটপাট শুরু করবে। তারা মানুষের দোকান, বাড়ি-ঘর, হিন্দুদের সম্পদ দখল করে, আমরা মানুষের হৃদয় দখল করি। তারা হিন্দুদের সম্পদ আত্মসাৎ করে আমরা হিন্দুদের আশ্রয়ের ঠিকানা হয়ে আছি এবং থাকবো। চোর-ডাকাতের দল মানুষকে ভয়ভীতি লাগায়, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে হাত কেটে দিবে! কিন্তু না এটা জামায়াতে ইসলামীর বিধান নয়, চুরি করলে হাত কেটে দাও এটা আল্লাহর বিধান। চুরি না করলে তো কারো হাত কাটবে না। অপরাধীরা ইসলামকে ভয় পায়। নিরপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ঠিকানাই হচ্ছে ইসলাম। তাই তিনি দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিয়ে সংগঠনের পতাকা তলে আসতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘১৯৪১ সালে জ্ঞান অর্জন, চরিত্র গঠন, সমাজ বিপ্লবের জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা হয়। জামায়াতে ইসলামী অসৎ নেতৃত্ব উৎখাত করে সৎ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে মানুষের কল্যাণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন করে জান্নাত লাভ করা। ২০০৫ সালে ওয়াল্ড জার্নালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে, জামায়াতে ইসলামী সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের ঠিকানা। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে সৎ যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। এই নেতৃত্ব কেবল জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে।
এছাড়া অন্য বিশেষ অতিথি সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এদেশের মানুষ অনেক দলের শাসনামল দেখেছে কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর শাসনামল দেখতে পারেনি। মানুষ আজ পাড়া-মহল্লায় আওয়াজ তুলছেন সব দেখা শেষ, আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের বাংলাদেশ। জামায়াতে ইসলামীর যেসকল নেতৃবৃন্দ ইতোপূর্বে এমপি-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে একজন নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রের সম্পদ লুট বা পাচার করার অভিযোগ নাই। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বাড়ি নির্মাণে কাউকে চাঁদা দিতে হবে না, ফুটপাতে সবজি বিক্রেতার চাঁদা দেয়া লাগবে না। ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবে কেউ এক টাকাও চাঁদা চাইবে না। কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার, দুর্নীতিবাজ থাকবে না। সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে জামায়াতে ইসলামী।’
উল্লেখ্য, ওয়ারী পূর্ব থানা আমির মোতাছিম বিল্লাহর সভাপতিত্বে টিকাটুলি শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সহযোগী সদস্য সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ারী-সূত্রাপুর-গেন্ডারিয়া জোনের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসান হাসান, ওয়ারী বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক মুক্তা, ওয়ারী পশ্চিম থানা আমির মাহফুজুর রহমান, ওয়ারী থানা শিবির সভাপতি মো: ইউসুফ ও সেক্রেটারি হাফেজ সোলাইমান গাজীসহ ওয়ারী পূর্ব ও পশ্চিম থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি