tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৩ এএম

রতন টাটার মৃত্যুতে কে কী বললেন?


image_129065_1728536506
ভারতের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি ও টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি ও টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন। বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।


বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

ভারতের শীর্ষ এ শিল্পপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ শীর্ষ রাজনীতিবীদ ও বিশিষ্টজনেরা।

পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা তার ভাই, বোন এবং পরিবার যারা তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তাদের প্রতি ভালবাসা এবং সম্মানের। যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাথে আর নেই, তবে তার নম্রতা, উদারতা এবং উদ্দেশ্যের উত্তরাধিকার ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেকারন বলেন, রতন টাটাকে আমাদের জাতির গঠনে তার অবদান অপরিমেয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন,আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে রতন নেভাল টাটাকে বিদায় জানাই। তিনি একজন সত্যিকারের অনুস্বরণীয় ব্যক্তিত্ব যার অবদান কেবল টাটা গ্রুপকেই নয়, আমাদের জাতির গঠনকেও ভূমিকা রেখেছে।

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তাকে অমায়িক লোক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, শ্রী রতন টাটা একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী নেতা, অমায়িক ব্যক্তি এবং অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি ভারতের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিকে স্থিতিশীল নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন।

ভারতের লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রতন টাটা দূরদর্শী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ব্যবসা এবং জনহিতকর উভয় ক্ষেত্রেই একটি দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তার পরিবার এবং টাটা পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার মৃত্যতে গভীর শোক জানিয়ে তাকে টাইটান অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে তাকে অমূল্য সন্তান বলে উল্লেখ করেছেন।

ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্দে তাকে ভারতের কোহ-ই-নূর বলেন উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (রতন টাটা) ছিলেন রত্ন, ভারতের কোহ-ই-নূর। তিনি মারা গেছেন, এবং এটা খুবই বেদনাদায়ক। গোটা দেশ ও মহারাষ্ট্র তাকে নিয়ে গর্বিত। এত উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি একজন সরল ও বিনয়ী ব্যক্তি ছিলেন।

১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্ম রতন টাটার। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরতে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান।

মুম্বাই, শিমলা হয়ে নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান রতন টাটা। ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সাতের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।

যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাতে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হন রতন টাটা।

২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

রতন টাটা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। তবে ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জীবনে প্রেম এসেছিল বলে স্বীকার করে নেন। চার-চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক পরিণতি পায়নি বলে জানান।

এনএইচ