বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে পারছে না জাপান, জানালেন রাষ্ট্রদূত
Share on:
চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশকিছু বাধার কারণে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে পারছে না জাপান। কোন ধরেনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলমজা সঙ্গে এক সৌজন্য স্বাক্ষাতকালে ইয়ামা কিমিনোরি জাপানে জনশক্তি রপ্তানির বিষয় তুলে ধরেন।
স্বাক্ষাতকালে প্রথমে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে মেট্রোরল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেঘনা সেতু, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের অবদান তুলে ধরেন।
বাংলাদেশি ছাত্র ছাত্রীদের জন্য জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সহজ করতে ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে দেশটির সহযোগিতা চান এফবিসিসিআই সভাপতি। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ লজিস্টিক সরবরাহে জাইকা, জেট্রোসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এসব ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইর সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলে জানান মাহবুবুল আলম।
এসময় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চাই আমরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
দু’দেশের যৌথ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার আরও সুযোগ রয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআইর পরামর্শ আহ্বান করেন রাষ্ট্রদূত।
জাপানে জনশক্তি রপ্তানি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি বাণিজ্যিকভাবে দু’দেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরও উন্নত করতে। তবে বেশকিছু বাধাও রয়েছে। বিশেষ করে জনবল আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে জাপান সরকার। পাশাপাশি সেখানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতাও বড় ভূমিকা রাখে।”বাংলাদেশীদের জাপান ভ্রমণ এবং দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করবেল বলে আশ্বাস্ত করেন রাষ্ট্রদূত।
একইদিন এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং। এসময়, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতসুমহে ভিয়েতনামের শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
দু’দেশের বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরে মাহবুবুল আলম জানান, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিলো ১১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। যার মধ্যে ১০১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৯২.৭৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেমের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি অস্বাভাবিক। বিশাল এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভিয়েতনাম থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ চাই আমরা। পাশাপাশি ভিয়েতনামকে বাংলাদেশে থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারণ, ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ, সামুদ্রিক সম্পদ, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশনস, হালকা প্রকৌশল, পর্যটন, চামড়া, পাট ও বস্ত্রসহ বেশকিছু খাতে ভিয়েতনামের বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয় সৌজন্য সাক্ষাতে।
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং বলেন, ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাছাড়া দু’দেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির মধ্যেও মিল রয়েছে। আমি আশাবাদি, অদূর ভবিষ্যতে ভিয়েতনাম-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
তিনি জানান, চলতি মাসের ২১ তারিখ ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি থেকে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফরে আসবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বাণিজ্য নতুন মাত্রায় পৌছবে বলে আশাবাদি এনগুয়েন মান কুং।
সৌজন্য সাক্ষাতসমুহে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, মো. মুনির হোসেন এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআই