tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৪, ১৭:৩১ পিএম

বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার নতুন সম্পর্ক কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত


111978_bnd

ডোনাল্ড লু যখন গত বছর বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন, তখন এই সিনিয়র আমেরিকান রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মাটিতে গণতন্ত্রের প্রচারে সোচ্চার হন।


সমালোচকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগকে সতর্ক করেছিলেন। ওয়াশিংটন অবাধ ভোটে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করে। প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং ভোটকেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগে কলঙ্কিত একটি ভোটের মাধ্যমে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয়ই এই নির্বাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নয়’ বলে সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ সরকারকে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে লড়াই করার বিষয়ে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা নিয়ে এই মাসে ঢাকায় আসেন। তার ২০২৩ সালের সফরের মতো এই মার্কিন কূটনীতিক এবারও বিরোধী নেতাদের এবং অধিকার গোষ্ঠীর সাথে বৈঠক এড়িয়ে গেছেন। ওয়াশিংটন এমন একটি দেশে গণতন্ত্রের বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে, সমালোচকদের মতে যে দেশ কিনা দ্রুত কর্তৃত্ববাদের দিকে চলে যাচ্ছে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিরক্তি সহকারে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে রিসেট করেছে।'

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর লু স্বীকার করেছেন যে, নির্বাচন সম্পর্কে ওয়াশিংটনের পূর্ববর্তী সতর্কতা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ও আস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনের দিকে ইঙ্গিত করেছে। বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত লু-এর তিনদিনের ঢাকা সফর সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি শুধু বলতে পারি যে, তার সফরের সময়, (তিনি) অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। বিরোধী দল, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটি দেশ, যখন ওয়াশিংটন চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি মূল্যবান মিত্র হিসাবে ভারত ও মিয়ানমারের পাশাপাশি ১৬৪ মিলিয়নের দেশটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ওয়াশিংটনের দ্বারা 'অন্যায্য' বলে বিবেচিত বিতর্কিত জানুয়ারির নির্বাচনের মাত্র একমাস পরে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন যাতে বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে কাজ করার ‘আন্তরিক ইচ্ছা’ প্রকাশের পাশাপাশি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অংশীদারিত্ব নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়।'

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কৌশলগত তাত্পর্যের দিক থেকে যথেষ্ট মাত্রায় স্বীকৃতি দেয়। তারা বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরের তীরে কৌশলগতভাবে অবস্থিত একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখে- বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে একদিকে বেইজিংয়ের সাথে যেমন সম্পর্ক জোরদার করেছে তেমনি নয়াদিল্লির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।' তবুও, লু’র ১৪-১৬ মে সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে, মার্কিন সরকার অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশি সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এটি একটি মোটামুটি হালকা শাস্তি - অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার চেয়ে অনেক হালকা এবং এটি বর্তমান সরকারকে নয়, একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক নেতাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে।'

ইলিনয় স্টেটের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, 'ওয়াশিংটন ব্যবসায়িক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এখনও বাংলাদেশ সরকারের ওপর কিছুটা প্রভাব বজায় রাখার লক্ষ্যে রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে, এই বিবেচনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্কের ওপর কোনোরকম টানাপোড়েন এড়াতে সহায়তা করবে। কিন্তু গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ইস্যুগুলোকে সমাধান না করে 'নরম' ইস্যুতে এই ধরনের সম্পৃক্ততা বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও কমিয়ে দেবে।'

বাংলাদেশের অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতার পরেও বছরের পর বছর ধরে ওয়াশিংটন ঢাকার সাথে তার বার্তা আদান-প্রদান বজায় রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাফকাত রাব্বি মনে করেন, 'বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রায় পতন সত্ত্বেও, দেশটি অনেকাংশে স্থিতিশীল রয়েছে। সুতরাং, আমেরিকার দৃষ্টিকোণ থেকে -একটি বিশৃঙ্খল, সহিংস, অস্থিতিশীল বাংলাদেশের চেয়ে একটি কম অশান্ত বাংলাদেশ অনেক ভালো, এমনকি সেখানে রাজনৈতিক নিপীড়নের চোরা স্রোত বিদ্যমান সত্ত্বেও।

এমএইচ