tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অপরাধ প্রকাশনার সময়: ৩১ জানুয়ারী ২০২২, ১২:৫০ পিএম

সিনহা হত্যার রায় দুপুর ২টায়


sinha.jpg

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় পিছিয়েছে।


পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় পিছিয়েছে।

আজ সোমবার ( ৩১ জানুয়ারি) সকালে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি পিছিয়ে দুপুরে ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার জেলা আদালতের ইন্সপেক্টর চন্দন কুমার দাশ সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের দুপুর ২টার দিকে আদালতে হাজির করা হবে। এর পর রায় ঘোষণা করা হবে।

মেজর সিনহা হত্যার রায়কে ঘিরে আদালতে চার স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

ঘটনার দেড় বছর পর আজ সোমবার এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আদালত দিন নির্ধারণ করেছেন। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গনে ভিড় বাড়তে থাকে।

এই মামলার রায় দুপুর ২টায় ঘোষণার কথা জানাজানি হলে বেশ কিছুক্ষণ সময় হাতে থাকায় আদালত প্রাঙ্গনে ভিড় কমে গেছে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের কী শাস্তি হবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল-আলোচনা রয়েছে।

তবে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষীতের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে মেজর সিনহার পরিবার।

এদিকে রায়কে ঘিরে কক্সবাজারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্য ও গোয়েন্দা নজরদারি।

সকালে প্রিজন ভ্যানে আসামিদের আদালত প্রাঙ্গণে আনার পথে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের বাড়তি সদস্য উপস্থিতসহ কক্সবাজারকে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা বলয়ে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স। বিচার চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে সর্বসাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হবে। সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামি কক্সবাজার কারাগারে আছেন।

র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত করেছি। প্রথম থেকেই আসামিদের আদালতে আনা-নেয়ার পথে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়েছি।

আজও র‌্যাবের বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও পেট্রোলিং থাকবে। তাছাড়া সাদাপোশাকে আমাদের সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করবে।’

এদিকে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিনটি ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়কে ঘিরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা কক্সবাজারে এসেছেন।

মেজর সিনহা হত্যার আসামি ওসি প্রদীপের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে তার পরিবার। এ ছাড়া অন্য আসামিদেরও অপরাধের ভিত্তিতে সাজা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

শুধু সিনহা হত্যাই নয়, ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক নিরাপরাধ মানুষ। তাদেরই একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী তার দুই মেয়েকে ধর্ষণে ওসি প্রদীপের জড়িত বলে দাবি করেছেন।

তিনি মেজর সিনহা হত্যার রায়ের দিন নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে প্রদীপের যেন ফাঁসি হয় এজন্য রোজা রাখছেন, সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, আমাদের আশা, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ অভিযুক্ত আসামিদের।

করোনা মহামারির মধ্যেও স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে বন্ধ হবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

প্রদীপ-লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা চায় সিনহার পরিবার :

সিনহার বড় বোন ও মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হোক।

এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে। আমার মতো আর কোনো বোনের বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাই রায়ে প্রমাণ হোক।’

তিনি বলেন, ‘মামলার ১৫ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে ১ ও ২ নম্বর আসামি (ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত) হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। এই দুই জনের সর্বোচ্চ সাজা হবে, আমরা এটা প্রত্যাশা করছি। বাকি আসামিদের যার যার অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেয়া হোক।’

শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আরো বলেন, ‘অবশ্যই আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দেবেন। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অর্থাৎ ক্রসফায়ার বন্ধ হবে বাংলাদেশে।

মানুষ সুবিচার পাওয়ার আশা রাখবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। যে কেউ বিচার চাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে আদালতে আসবেন।’

সিনহার পরিবারের পাশাপাশি মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে।

এইচএন