গাজায় নিহত প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার, প্রজন্ম ধরে চলবে যুদ্ধ
Share on:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলা বন্ধের কোনো আশা মিলছে না। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের এক মন্ত্রী বলছেন যে, গাজায় যুদ্ধ চলতে পারে এক প্রজন্ম ধরে।
ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে যদি আরো অনেক বেশি ফিলিস্তিনি রাফায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমন অবস্থায় সেখানে নাগরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত একদিনে গাজায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৬৫ জন আহতের সংখ্যা ২৯০। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৭ জন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে গাজার ৮৫% জনসংখ্যা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া গাাজর ৬০% অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধ ১০ বছর বা এমনকি একটি পুরো প্রজন্ম স্থায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু সরকারের একজন সিনিয়র সদস্য। যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, হুমকি নির্মূল করতে সময় লাগবে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলোর অন্যতম উৎস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
গত ৭ অক্টোবর কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় কয়েক হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, বিস্ফোরক, ছোট ও হালকা অস্ত্র এবং প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে হামাস।
প্রায় ১৭ বছর ধরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা গাজা। এছাড়া আকাশ ও নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বেও হামাসের হামলায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ব্যবহারে কীভাবে হলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও উপকারী বিদেশি বন্ধুর সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
এছাড়া অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবরোধের মধ্যেও হামাসের কাছে এত ভারী অস্ত্র থাকার কারণ হলো, গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে তৈরি করা পথে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তাদের হাতে আসে।
কিন্তু ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রের অন্যতম উৎস ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় দখলদার দেশটির ফেলা অবিস্ফোরিত হাজার হাজার গোলাবারুদ দিয়ে নিজেদের জন্য রকেট ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে হামাসের। এছাড়া ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্রও হামাস তাদের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
গত কয়েক মাসের লড়াইয়ের সময়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামাসের সম্পর্কে ৭ অক্টোবরের আগে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা ভুল। তেমনি তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টিকেও ছোট করে দেখেছে ইসরায়েল।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিগত ১৭ বছরের গাজা অবরোধকালে সেখানে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এখন সেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
এনএইচ