দেশের মানুষ সরকারকে সুখে থাকতে নাও দিতে পারে : জিএম কাদের
Share on:
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় করতে না পারলে সামনের দিকে দেশের মানুষ সরকারকে সুখে থাকতে নাও দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত ১১ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। যার জন্য সরকারের কোনো ব্যবস্থাই কাজ করছে না। আমরা প্রথম দিন থেকেই সেটা বলে আসছি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কষ্টে থাকায় ভেতরে ভেতরে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়ছে না। বরং প্রতিদিন আয় কমছে। অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য কোনো মঙ্গলজনক অবস্থা নয়।
বিরোধী দলীয় এই নেতা বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা সকলেই অবগত আছেন। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা চোখে পড়ছে না। তবে ভেতরে ভেতরে একটা অস্থিরতা তো অবশ্যই আছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যেটা বুঝতে পারছি, সেটা হলো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ।
বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির মাঠে কোনো কর্মসূচি থাকবে কি না- জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, যখন সময় আসবে, তখন দেখবেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ধস হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ৩৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ২০০১ সালে ৩০০ আসনে সর্বশেষ আমরা নির্বাচন করেছি। তখন কেয়ারটেকার সরকারের আমলে একটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে আমরা ১৪টি আসন পেয়েছিলাম। এবার আমরা ১১টি আসন পেয়েছি দীর্ঘ ৩৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরেও। জাতীয় পার্টির যে খুব বেশি ধস হয়েছে, এটা আমি মনে করি না।
জিএম কাদের বলেন, এই নির্বাচনটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমি সবসময় এই নির্বাচনের অনিয়মগুলো তুলে ধরেছি। নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময় থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত আমি সব অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলেছি। যেটা পরিবর্তীকালে সঠিক হয়েছে।
সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সমালোচনা করেছেন- তা নিয়েও কথা বলেন জিএম কাদের।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমি ঠিক জানি না অসন্তোষ বলতে কী বোঝায়। আমরা স্পিকারের কাছে আমাদের কী কী প্রত্যাশা তা বলেছি এবং যুক্তি দিয়ে বলেছি। তারপরও অনেকে বলছে রেওয়াজ ছিল না। রেওয়াজ তো মানুষই তৈরি করে। রেওয়াজ তো কোনো আইন নয়। তাছাড়া নতুন রেওয়াজ তৈরির জন্য তো মানুষই ভাঙে। আইন থাকলে কোনো সময় আইনও পরিবর্তন করা যায়। আসলে কেন অসন্তুষ্ট হলেন, আমার জানা নেই। সংসদের বক্তব্য নিয়ে যারা অসস্তুষ্ট হয়েছেন, তারা হয়তো আমার বক্তব্যটা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুসহ নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আলাউদ্দিন মিয়া ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, জাতীয় পার্টির নেতা আনিছুর রহমান আনিছ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাফিউর রহমান শাফি, কেন্দ্রীয় সদস্য ও রংপুর মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, জাতীয় যুব সংহতি রংপুর জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাসুদ মাসুদ নবী মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১১ জন সংসদ সদস্যসহ পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এসএম