tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
সারাদেশ প্রকাশনার সময়: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম

‘৭ দিন থাকি মরণের তিস্তার ভাঙন শুরু হইছে, কেউ আসি দেখিল না’


rangpur-20240907090917

‘কয়েক দিন থাকি সরকারি লোকক খবর দিয়া পাঠাইচোল একনা কায়ও ভুল করিয়াও ভুলকি মারিবার আসিল না ব্যাহে। আইজ ৭ দিন থাকি মরণের তিস্তার ভাঙন শুরু হইছে। কেনো মেম্বার, চেয়ারম্যান কাও আসি দেখিল না। বাড়ি ভাঙি বাঁধের ধারত ফ্যালে থুছি সরকারের কেনো একটা প্রতিনিধি আসিল না দেখিবার, দ্যাশত থাকি কি সরকারি লোকজন চলি গেইছে?’


রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলি গ্রামের বাসিন্দা দুদু মিয়া (৪৬) এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তিস্তার ভাঙন হুমকিতে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়ে রাস্তার ধারে রেখেছেন তিনি।

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আবারও তিস্তায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। তিস্তায় পানি কম থাকলেও গত এক সপ্তাহে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে চারটি পরিবারের ঘর-বাড়ি ও কয়েক শত একর ফসলি জমি। চলতি বর্ষা মৌসুমেই এবারে তিস্তা এগিয়ে এসেছে লালমনিরহাটের কাকিনা ও রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ সড়কের হাফ কিলোমিটারের কাছে।

স্থানীয়রা বলছেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই আঘাত হানতে পারে প্রধান সড়কটিতে। এতে তিন গ্রামের ১ হাজার ৫০০ পরিবারসহ ক্ষতি হতে পারে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুটিরও।

শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধের মোকা থেকে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলিগ্রাম পর্যন্ত তিস্তার তীরবর্তী প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই তিস্তার গর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের শত শত একর ফসলি জমি।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোন্নাফ মিয়া বলেন, আমরা প্রায় ১০-১২ দিন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোন করে ভাঙনের বিষয়টি জানাচ্ছি। কিন্তু উনি লোক পাঠাতে চেয়েও কাউকে পাঠাননি। কয়েকদিন আগেও তিস্তা নদীর ভাঙন আমাদরে বাড়ি থেকে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার দুরে ছিল। এই কয়েকদিনেই ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন প্রাধান সড়ক থেকে মাত্র হাফ কিলোমিটারের কাছে চলে এসেছে তিস্তা। উজানে বৃষ্টি হলেই তিস্তার ভাঙন আঘাত হানবে মেইন সড়কেও।

একই গ্রামের বাসিন্দা তিস্তার ভাঙনে ভিটামাটি বিলীন হওয়া আলিমুদ্দিন (৬৫) জানান, কয়েকদিনের ভাঙনে সব বিলীন হয়া গেলো ব্যাহে। বাড়ি ভাঙিল, ফসলি জমিগুলাও ভাঙি গেলো। সরকারি কেনো লোকজনের দেখা না পেয়া নিজে নিজেই হামরাগুলা গাছ, বাঁশ কাটি ফ্যালে দিয়া ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কেনো কাজ হয় চোল না।

এ বিষয় গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, আমি বিষয়টি জেনে ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়েছিলাম। কাল আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি প্রবাহ ৫১ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।

একই সময়ে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের সব প্রধান নদ-নদী সমূহের পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানিসমতল স্থিতিশীল আছে যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সামগ্রিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নদীসমূহের স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।

এনএইচ