বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম কমেছে
Share on:
গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। গত এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেল এবং ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। হিটিং অয়েলের দাম কমেছে ২ শতাংশের ওপরে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে দশমিক ৭৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। গত এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেল এবং ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।
হিটিং অয়েলের দাম কমেছে ২ শতাংশের ওপরে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ।
বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলে গত বছরের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে তেল।
সেদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়।
রেকর্ড এই দরপতনের পরই অবশ্যই তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে গত বছরের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝে বিশ্ববাজারে তেলের বড় দরপতন হয়।
গত বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অপরিশোধিত ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়।
তবে এ পতনের ধকল কাটিয়ে গত বছরের নভেম্বর থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। অবশ্য প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে থেকেই ২০২০ সাল শেষ হয়।
আর চলতি বছরের শুরুতে তেলের দামের এ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক দফা দাম বেড়ে করোনার মধ্যে প্রথমবার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারে উঠে আসে।
এর মাধ্যমে মহামারি শুরু হওয়ার আগের দামে ফিরে যায় অপরিশোধিত তেল।
আর ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর গত জুনে করোনার প্রকোপের মধ্যে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে।
আর অক্টোবরে এসে তেলের দাম বৃদ্ধির পালে নতুন করে যেন হাওয়া লাগে। এতে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর মাধ্যমে ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠে আসে তেলের দাম।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় সরকার।
ওইদিন রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ তেলের দাম সমন্বয় করছে।
গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজার মূল্য লিটার প্রতি ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপি ছিল।
আর বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৪১ টাকা কম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেলে লিটার প্রতি ১৩ দশমিক ০১ টাকা কমে বিক্রি করছে।
অপরদিকে ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে লিটার প্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি।
অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান দামে সরবরাহ করায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
অপরদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাটসহ কেজিতে সাড়ে ৪ টাকা হারে বাড়িয়ে ৪ নভেম্বর এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৩ টাকা।
একই হারে দাম বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম। সেই সঙ্গে রেটিকুলেটেড এবং যানবাহনে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে।
রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে সরবরাহ করা এলপিজির দাম ভোক্তাপর্যায়ে মূসক ছাড়া প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ৩৭ পয়সা এবং মূসকসহ প্রতি কেজি ১০৬ টাকা ১৯ পয়সা ঠিক করা হয়েছে।
অক্টোবরে এ গ্যাসের দাম মূসক ছাড়া প্রতি কেজি ছিল ৯৫ টাকা ১৭ পয়সা এবং মূসকসহ প্রতি কেজি ১০১ টাকা ৬৮ পয়সা।
আর যানবাহানে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের মূসক ছাড়া দাম প্রতি লিটার ৫৭ টাকা ৬১ পয়সা এবং মূসকসহ ৬১ টাকা ১৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অক্টোবরে এই গ্যাসের দাম মূসক ছাড়া দাম প্রতি লিটার ৫৫ টাকা ২৭ পয়সা এবং মূসকসহ ৫৮ টাকা ৬৮ পয়সা ছিল।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গাড়ির ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে ডিজেল, কেরোসিন এবং গ্যাসের এই দাম বাড়ার সমালোচনা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া বাড়ানোরও সমালোচনা করা হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি তেল আবার আগের দামে ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এ পরিস্থিতিতে গেল এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রবণতা দেখা গেলো। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দশমিক ৯০ ডলার কমে ৮০ দশমিক ৬৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এতে সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম এখনো দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
আর বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এখন ৬৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও গত সপ্তাহ কিছুটা কমেছে। গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দশমিক ৭৩ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ১৪ ডলার।
এতে গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম এখনো ৫৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
অপরদিকে গত এক সপ্তাহে ২ দশমিক ১১ শতাংশ কমে প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েলের দাম ২ দশমিক ৪০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে হিটিং অয়েলের দাম কমেছে ৪ দশমকি ৬৬ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে হিটিং অয়েলের দাম এখনো ৬১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
এদিকে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি গেল এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও কমেছে। গত এক সপ্তাহে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এতে মাসের ব্যবধানে প্রকৃতিক গ্যাসের দাম কমেছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে এরপরও বছরের ব্যবধানে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম এখনো ৮৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি।
এইচএন