tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৫ পিএম

মাঠে ফসল ফলানো গৌরবের, লজ্জার নয় : প্রধানমন্ত্রী


63

মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,সেই ভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।।


অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেতো। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নেই। সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান ও বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনাকালে যখন আমাদের কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না, ধান কাটতে আমি যখন আমাদের ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সকল ছেলে-মেয়েকে নির্দেশ দিলাম তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে। অর্থাৎ যেটা খেয়ে তোমাদের জীবন বাঁচবে সেই কাজ করাটা লজ্জার না, গর্বের।

তিনি আরও বলেন, সেই মানসিকতাটাও চেঞ্জ করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আজকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের যুব সমাজকে আরও সম্পৃক্ত করার দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার।

কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষকদের সুবিধার জন্য তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দেন। পাকিস্তানের আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করে দেন।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ করা শুরু করেন, গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করেন। বাজেটে কৃষিকে সব থেকে তিনি বেশি গুরুত্ব দেন। বিদেশ থেকে সেচের ব্যবস্থা করার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা শুরু করেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার পরিকল্পনাও তিনি হাতে নেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।

বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনকে বেশি প্রধান্য দেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারছি না। যদি চাল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্য বাংলাদেশে আসেনি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করবো। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন- এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়।

শ্রমিকরা ন্যায্য মুজুরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা সেই সমস্ত জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল- কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাবো না। ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশের ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। একদিকে আমরা যেমন বন্যা সামাল দিয়েছি, হাতে রুটি তৈরি করে প্রত্যেকটি জায়গায় মানুষের খাবার পৌছে দিয়েছি, স্যালাইন তৈরি করে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি, পানি বিশুদ্ধ করে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি, সাথে সাথে আমরা আরেকটা কাজ করেছিলাম।

আমাদের যেসব জায়গায় বন্যা হয়নি, সেখানে আমরা বীজ এবং সার দিয়ে এমনকি ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুরু সমস্ত জায়গায় আমরা বীজতলা তৈরি করার ব্যবস্থা নিই। পানি নামার সাথে সাথে এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টার করে সেই বীজ তলা, সার এবং নগদ টাকা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌছে দেই। যার ফলে ৯৮ সালের বন্যার পরই আমরা কিন্তু বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি।

তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সাথে সাথে উঠে বলা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারাজীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের উপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলবো আমরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সব কিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথায় বলেছিলেন, আমার মাটি আছে মানুষ আছে। এই আমি মাটি-মানুষ দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছালে দুই শিশু প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাসি মুখে শিশুদের কাছ থেকে ফুলের তোড়া গ্রহণ করেন। পরে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী হেঁটে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। তিনি কেন্দ্রটি ঘুরে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।

এন