জালিম সরকারের পতন ছাড়া আন্দোলন থামবে না: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
Share on:
ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। জনগণকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এই জালিম সরকার নিজেরা স্বাধীনতার কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে অথচ তাদের দ্বারাই এখন দেশ ও দেশের মানুষ পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ। তারা গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করেছে।
প্রথমে বাকশাল কায়েম করেছিলো, সে সময় ৪টা পত্রিকা ছাড়া দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করেছিলো। এবার তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে জুলুমতন্ত্র কায়েম করেছে। আজ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না, মত প্রকাশ করতে পারছে না, এমনকি তার উপর জুলুম করা হচ্ছে অথচ তারও প্রতিকার চাইতে পারছে না। তারা দেশের মিডিয়াকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, ফলে সাংবাদিকেরাও সত্য বলতে ও লিখতে পারছে না।
এ অবস্থায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। আমরা ১ দফার লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছি, সরকারের পতন ছাড়া এই আন্দোলন আর থামবে না। আমরা বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। তিনি চলমান আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে মহান রবের নিকট দোয়া করেন।
তিনি শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপি কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবরোধ চলাকালে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুর রহিম জীবন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সকলকে সভা-সমাবেশ করার, কথা বলার ও রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার অবৈধভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আজকে জামায়াতের নেতাকর্মীসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপর বর্বর জুলুম করা হচ্ছে। কর্মস্থল ও বাসা বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ গুলো তছনছ ও ধ্বংস করে দিচ্ছে। এভাবে তারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে চায় কিন্তু তারা জানে না আমরা শহীদদের উত্তরসূরী, যারা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও হাসি মুখে বলেছিলেন আমি কোন পোশাক পরে ফাঁসির মঞ্চে যাবো।
তাই আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা মজলুম আর যুগে যুগে মজলুমরাই দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এদেশে তার দ্বীনকে বিজয়ের জন্যই আমাদেরকে কবুল করেছেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার স্বাধীন ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য সাহসিকতার সাথে আমাদের ময়দানকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান আন্দোলনে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে আমরা লিপ্ত নই অথচ সরকার তার এজেন্টের মাধ্যমে জনগণের জান ও মালের ক্ষতি করে তার দায় আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অপ্রচেষ্টা করছে। এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। চলমান আন্দোলনে মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ হয়েছে। সামনে আরও বড় কর্মসূচি আসছে। তিনি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একটি বড় বিপদ থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য একটু কষ্ট স্বীকার করতে হবে। চলমান আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচী সফল করায় তিনি দেশবাসী জনগণকে অভিনন্দন জানান। আজকে এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ, সকল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অতীতে কখনো ব্যর্থ হয়নি, আগামীতেও বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকার দলীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ ও তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। একইসাথে তিনি ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনে এখন পর্যন্ত ৮০০০ হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছেন, যা সকল বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন একদিন আসবে ইহুদীরা পালানোর পথ পাবে না। ইহুদীরা পরাজিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল শুরুতেই অবরোধ সহ চলমান আন্দোলন সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মাগফেরাত ও আহতদের জন্য দোয়া করে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন করছে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের আন্দোলন চলছে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল নেতাকর্মী ও আলেম ওলামার মুক্তির জন্য। আমরা আন্দোলন করছি দেশের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে দেশের মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার জন্য। আমাদের আন্দোলন এদেশের মানুষের মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। এই অবৈধ সরকার জনগণকে বঞ্চিত করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের মতো আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু আজ জনগণ ঐক্যবদ্ধ, বিরোধী দল গুলো ঐক্যবদ্ধ।
এদেশের মানুষ আগামীতে আর এই স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর তারা লঘি-বৈঠার তান্ডব চালিয়ে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল আমরা সেই ২৮ অক্টোবরেই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য রাজধানীতে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ করেছি। যে শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করে এদেশের ইসলামী মূল্যবোধকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল সেখানেই আমরা মহাসমাবেশ করেছি। সেদিন সরকার নজীরবিহীনভাবে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা চালিয়েছে, আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামী দিনে চলমান আন্দোলনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে সেখানে জনগণকে সাথে নিয়ে সকলকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, স্বাধীনতার এতো দিন পরেও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। এখনো তারা গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ। ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার সরকার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সকলকে চলমান আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সরকার জনগণের অধিকার আদায়ের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সর্বাত্মক হীন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপির অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতের অফিসগুলোও বন্ধ রয়েছে। আমরা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসসহ সারাদেশে সকল অফিস গুলো খুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সেখানে ইসির চলমান তৎপরতাকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে আছি সেই আন্দোলনকে সফল করেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি