ফ্যাসিবাদের মোকাবিলা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে : মুজিবুর রহমান
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের জুলুম নির্যাতন মোকাবিলা করে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যুগে যুগে যারা ইকামাতে দ্বীনের কাজ করেছে, তারা অনেক জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। এ দেশেও জামায়াত ইকামাতে দ্বীনের কাজ করার কারণে অনেক জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। ইকামাতে দ্বীনের কাজের মাধ্যমেই মুমিনদের সফলতা নিশ্চিত হতে পারে। এজন্য শাহাদাতের তামান্না নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। জামায়াতের রুকনদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে এবং পিতা-মাতার খেদমত করতে হবে। পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটি বানাতে হবে। সন্তানদের আধুনিক জাহিলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করতে হবে। আওয়ামী সরকার জনগণের বাক-স্বাধীনতাসহ ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দুর্বল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের জন্য দোয়া করতে ও সাহায্য পাঠাতে হবে। কোনো ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে সংগঠনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জালিম শাসকের বিরুদ্ধে হক কথা বলতে হবে। জামায়াত সব সময় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কুরবানির বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই সরকারকে বিদায় করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিকে কাজ করতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয়ী হতে হবে।
তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি ও ইসলামের দুশমনরা বসে নেই। তারা ৯২ শতাংশ মুসলমানদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ইসলামের আদর্শ বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চালু করতে চাইছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একজন মুসলমানের সন্তানের ইসলাম সম্পর্কে জানার ও বোঝার সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা চালু করতে হবে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য সদ্য কারামুক্ত অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সদ্য কারামুক্ত মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আল্লাহ দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমরা যদি সত্যবাদী ও মুত্তাকী হয় এবং ইনসাফ ও আদল কায়েম করতে পারি, তবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের খেলাফতের দায়িত্ব দেবেন। ফ্যসিবাদী সরকারের জুলুম নির্যাতন সহ্য করে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করে যেতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর গণভিত্তি তৈরি করতে হবে। নিজস্ব ভোট ব্যাংক তৈরি করতে হবে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের শহীদ করে দেয়া হয়েছে। আমিরে জামায়াতসহ অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এ টি এম আজহারুল ইসলাম ভাই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। আমরা সকল নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের মাধ্যমে আমরা সকল শহীদের রক্তের বদলা নেব ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হলেও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ইসলামী আন্দোলনের রাজধানী। এজন্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রত্যেক মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ ও কুরআনের বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে যুগের সকল চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের যাবতীয় ফিতনা থেকে জামায়াতের সকল পর্যায়ের জনশক্তিকে দূরে থাকতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছি। আমাদের আমীরে জামায়াতসহ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীদের আহত ও পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। মিথ্যা, বানোয়াট ও বায়বীয় মামলার আসামি করে লক্ষ লক্ষ জামায়াত নেতাকর্মীদের এখনো হয়রানি করা হচ্ছে। তবুও ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি। সকল জুলুম নির্যাতন ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এদেশের মাটিতে ইসলামকে বিজয়ী করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমাদের দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে এক রব এবং রাসুলকে সা: আমাদের নেতা মানার দাওয়াত। কুরআন ও সুন্নাহ আলোকে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে জামায়াত কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই কাজে একদিন সফল হব। এজন্য সমাজ থেকে অসৎ নেতৃত্ব বিদায় করে সৎ, যোগ্য, মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সহ সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণকে ইসলামী আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে হবে। নিজেদের পরিশুদ্ধ করে, আরাম আয়েশসহ জান-মালের কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এজন্য রুকনদেরকে সংগঠনের নির্দেশনা শতভাগ অনুসরণ করে ইকামাতে দ্বীনের কাজকে বাস্তবায়ন করতে হবে। জালিম সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে রুকনদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নানসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিররা।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে এই সদস্য (রুকন) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি