এবার গাজা থেকে সরে যেতে ৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ইসরায়েলের
Share on:
এবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে সরে যাওয়ার জন্য মাত্র তিন ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করিডোর ব্যবহার করে গাজার উত্তরের বাসিন্দারা দক্ষিণে চলে যেতে পারবেন বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে।
রোববার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘গাজা নগরী ও উত্তর গাজার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আইডিএফ রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত ১টা পর্যন্ত এই রুটে কোনো অভিযান চালাবে না।
গাজাবাসীর উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ‘দয়া করে নির্ধারিত এই সময়ে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সুযোগ নিন।’
আইডিএফ বলছে, গাজার বাসিন্দা এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়া করে আমাদের নির্দেশাবলী মেনে চলুন এবং দক্ষিণ দিকে সরে যান। এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, হামাস নেতারা ইতিমধ্যে নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
রোববার সকালের দিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করে। এতে দাবি করা হয়, গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে চলে যেতে বাধা দিচ্ছে হামাস। বেসামরিক জনগণকে হামাস মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের দক্ষিণের দিকে চলে যাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হয়। আল্টিমেটামের সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে পদক্ষেপের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
গাজা ভূখণ্ডে স্থল, বিমান ও নৌপথে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইতিমধ্যে গাজা সীমান্তে শত শত যুদ্ধ ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও লাখ লাখ সৈন্য সমাবেশ করেছে ইসরায়েল। তবে কখন এই হামলা শুরু করবে সে সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, গাজায় পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপ আসছে। শুধু শনিবারই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৩০০ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮০০ মানুষ।
গত সপ্তাহে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় এবং এতে প্রায় ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে আরও অন্তত দেড়শ জনকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েল ব্যাপক বোমা বর্ষণ করায় গাজায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝেই রোববার ইসরায়েলি একটি গ্রামে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এতে ইসরায়েলের অন্তত এক নাগরিক নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন। রোববার হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের চিকিৎসকরা এই তথ্য জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের চিকিৎসকরা বলেছেন, লেবাননের আয়তা-আ-শাব এলাকার সীমান্তের অপরপাশের ইসরায়েলের শটুলা কৃষি খামারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি এক নাগরিক নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, হামলার জবাবে লেবাননের ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। একই সাথে লেবানন সীমান্ত লাগোয়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডের ৪ কিলোমিটার এলাকায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলাকায় জনসাধারণের চলাচল সীমিত করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
এমবি