tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ২০:০৬ পিএম

দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা


Nazim-673de7d1b3876

জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ শহিদ হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক রয়েছেন। তাদেরই একজন শহিদ গোলাম নাফিজ। তিনি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪ আগস্ট বিকালে ফার্মগেটের পথচারী-সেতুর নিচে গুলিবিদ্ধ হন নাফিজ। ‘বেঁচে থাকলে আরও দুইটা গুলি কর’- গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে ড্রেন থেকে রিকশায় তোলার সময় বলছিলেন এক পুলিশ সদস্য। মুমূর্ষু নাফিজকে পাশের হাসপাতালে নেওয়া হলে দরজা থেকে ফিরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চিকিৎসা পেলে হয়তো প্রাণে বাঁচত, সেই আফসোসে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে নাফিজের পরিবার।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পুলিশ যখন রিকশার পা-দানিতে তুলে দেয়, তখনো নাফিজ রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলেন। নাফিজ নয়, যেন রিকশার পাদানিতে ঝুলছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। ১৭ বছরের নাফিজের বুলেটবিদ্ধ দেহ, রক্ত ঝরে ঝরে নিথর হলেও মাথা থেকে খসে পড়েনি দেশের পতাকা। যে ছবিটি কাঁদিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশকে। 

নাফিজের সেই ছবিটি আবার দেশবাসীকে কাঁদাল। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শহিদ নাফিজের মা নাজমা আক্তার। এ সময় ছেলের ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের ছবি স্পর্শ করে বিলাপের একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিও এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওটি ছেলে হারানোর শোক আবার পুরো বাংলাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। 

ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা তো এখনো বেঁচে আছি, মা! আপনার সন্তান জীবন দিয়ে গেছে, যেই বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে জীবন দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবয়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে আমৃত্যু। যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আপনাদের হাহাকার ঘুচাবোই- ইনশাআল্লাহ’।

আব্দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মোহাম্মদ সোহেল বলেন- ইনশাআল্লাহ জনগণ আপনাদের পাশে আছে; ক্ষমতার লোভে নেতারা ভুলে যেতে পারে, এই দৃশ্য আমরা কিভাবে ভুলব যা চোখে দেখেছি।

শারমিন মুক্তি লেখেন- নতুন করে শুরু করতে হবে। বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে।

আরএইচ ইউসুফ লেখেন- যাদের আওয়ামী লীগকে লাগবে আমরা তাদের বয়কট করব।

এমআর জামসেদ বলেন- সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে শহিদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।

মাইনুল ইসলাম লিখেছেন, শহিদ নাফিজের মা পুরো জাতির মা।

নির্মাতা আশফাক নিপুন বলেছেন- ‘This is heartbreaking! জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ নাফিজের মা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন ছেলে হত্যার বিচার যেন উনি পান! নাফিজ এবং নাফিজের মতো হাজারও শহিদের খুনিদের বিচার অবশ্যই হতে হবে, যেই ক্ষমতায় থাকুক আর আসুক না কেন!’

ছেলের ছবি ছুয়ে দেখছেন শহিদ গোলাম নাফিজের মা- এমন একটি ভিডিও শেয়ার করে নাফিজ বাশার আলিফ বলেন- ‘আমি জনম জনম রাখবো ধরে ভাই হারানোর জ্বালা!'

রনি শেখ বলেন, অনেক শহিদের পরিবারের আর্তনাদ দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো এতটা খারাপ কখনো লাগেনি। মনের অজান্তেই কখন যেন চোখের কোণে এক ফোঁটা পানি বেরিয়ে এলো বুঝতেই পারলাম না। আল্লাহতায়ালা যেন এর বিচার করেন-আমিন। 

সাইফুল ইসলাম সাইফ লিখেছেন- এই মায়ের কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।

আহমেদ রেদওয়ান লিখেছেন- আল্লাহতায়ালা এই মায়ের দোয়া বিফল হতে দেবেন না।

শহিদ নাফিজের মায়ের ছবিটি শেয়ার করে তানজির আহমেদ সিয়াম বলেন, স্বজন হারোনোর বেদনা এবার ১৮ কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করে বিপ্লব আহমেদ লিখেছেন- অথচ এ দেশের নষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের মাথা পরিবর্তন হয়নি, কোনো দিন হবেও না। 

সাংবাদিক আবু সুফিয়ান বলেন, ছবি হয়ে যাওয়া সন্তানকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন শহিদ গোলাম নাফিজের মা।

এদিকে কিছু লোক চেষ্টা করছে শহিদ নাফিজের খুনিদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে। ‘যারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দেয়, আসলে তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।’ [আল কুরআন ২:৯]

এসএম জাবের রনি নামে একজন লিখেছেন- দেখুন কী পরম মমতায় ছবিতে হাত বুলিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে আদর করছেন তিনি।।শহিদ নাফিজের মা তিনি। আচ্ছা, খুনি পলাতক স্বৈরাচারী আপাকে মাফ করে দিলে কি তিনি নাফিজকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আবু সাঈদ, মুগ্ধ কিংবা রিয়াকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? এই ছেলেগুলো বা রিয়ার মতো শিশুগুলো কি তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে ফ্যাসিস্ট খুনি হায়েনা এবং তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। তাদের নিয়ে একটা নির্বাচন করার জন্য। তাহলে কেন এই প্রশ্নগুলো সামনে আসবে? সবার আগে এই খুনির দলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি এদের বিচার না করে নানান ধরনের টালবাহানা করতে থাকেন তাহলে শহিদ নাফিজ, আবু সাঈদ, মুগ্ধ কিংবা রিয়াকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। 

মুজাহিদ নামের আরেকজন লেখেন- এই সরকারকে কারা ব্যর্থ করতে আদা-জল খেয়ে লাগছে? আসিফ নজরুল কোন দলের পারপাস সার্ভ করতেছেন? কারা মাহফুজ ভাইকে ইউনূস থেকে বিচ্ছিন্ন করছেন? কারা নাহিদ ও আসিফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে নামছেন? কারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করতেছেন? আমরা সব বুঝি! জাতীয়তাবাদের খোলসে আর ধর্মের খোলসে যেভাবেই করুক আমরা বুঝি! 

জামান কিরণ নামে এক নেটিজেন বলেন, হাসিনা এক রক্তপিপাসু স্বৈরাচার। যারা পিশাচের দল আওয়ামী লীগকে এ দেশে রাজনীতির সুযোগ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন, তাদেরও হাসিনার পথ ধরিয়ে দিতে হবে। শহিদের রক্তে রাঙা পথে শহিদের সাথীরাই চলবে। অন্য কেউ না। শহিদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে আসা বিপ্লব বৃথা যেতে পারে না, বৃথা যেতে দেব না। সব শহিদের রক্তের শপথ।

শহিদুল ইসলাম আরাফাত বলেন, ছাত্র-জনতার নার্ভ বুঝতে না পারা দলগুলো অচিরেই ‘গণ-সার্কাস পরিষদে’ রূপান্তরিত হবে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারবিহীন এই সংবিধানের আলোকেই যদি নির্বাচন চান তাহলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিলেন না কেন? ভণ্ডামির একটা সীমা-পরিসীমা থাকা জরুরি।

ফাইজান নামে এক নেটিজেন বলেন, শহিদ নাফিজের মায়ের এই ঋণ আমরা শোধ করব কিভাবে?

আব্দুল্লাহ আল মমিন বলেন, আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে হবে, ওরা মানবতার শত্রু।

স্বাধীনতা-২৪ নামের পেজ থেকে লেখা হয়েছে- ‘এই কান্না কি বিএনপির কানে পৌছায় না? কীভাবে এই রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তারা ফ্যাসিস্টকে আবারো ক্ষমতায় আনার পথ সুগম করতে চায়! আর এদিকে শহিদ নাফিজের মা হয়তো জানেনই না, তার ছেলের হত্যাকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে!

এসএম