রাজনৈতিক মাঠে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ
Share on:
বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক মাঠে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আসছে ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক মাঠে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলা করতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে নানা কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটি এখন বিরোধী শিবিরের কর্মসূচির দিকে কড়া নজর রাখছে।
তাদের পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে সরব থাকতে চায় দলটি।
বিশেষ করে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বিরোধীদের যে কোনো কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি পালনের জন্য নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের আন্দোলনকে ভয় পায় না।
আন্দোলনকে আমরা ওয়েলকাম জানাই। তারা তো অনেক আগে থেকেই আন্দোলনের কথা বলে আসছে। তাই আমরা এখন দেখতে চাই তারা কি ধরনের আন্দোলন করে।
আর এ বিষয়ে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো বলেই আসছেন আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে।
এই ধরনের কর্মসূচিগুলো যেকোনো সময় সহিংস রূপ নিতে পারে। এছাড়াও হাফপাস, নিরাপদ সড়কের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্ররা বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করেছে এবং আন্দোলন করেছে।
এই সড়ক অবরোধ এবং আন্দোলন যেকোনো সময় অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বলেও আওয়ামী লীগ মনে করছে। আর এ কারণেই কর্মীদেরকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন করার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে।
পরিবহনের ভাড়া কমানোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু এই আন্দোলনকে কেউ যেন অন্য খাতে না নিয়ে যেতে পারে এবং এসব আন্দোলনের মূল লক্ষ্য যেন ষড়যন্ত্র না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ সজাগ।
আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের সংগঠিত হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দুই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বার্তা দেয়া হয়েছে।
তারা যেন দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করে এবং পহেলা ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাসের ৫০তম বার্ষিকীর মাসের সূচনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এর দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে শান্তিকামী দল।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত এখন উগ্রপন্থি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। বিশেষ করে আন্দোলনের জন্য রাজধানী ঢাকাকে সবাই আগে টার্গেট করে।
তাদের সাম্প্রতিক কর্মসূচির মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড এর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছি। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের জানমালের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তাদের চলাচলে কেউ যেন বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। প্রয়োজনে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস এবং এই বিজয় স্বাধীনতার আমাদের ৫০তম বিজয়ের বার্ষিকী। সেজন্য আওয়ামী লীগ পুরো মাসব্যাপী নানারকম কর্মসূচি রেখেছে।
সেই কর্মসূচির মধ্যে সভা-সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি রয়েছে। তারাা জানান, খালেদা জিয়ার ইস্যুকে নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা চলছে এবং এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে একটা নাশকতা সৃষ্টি এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
আর এটা শুধু প্রশাসনিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করতে চায়। তারা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতার চরম পর্যন্ত দেখিয়েছেন।
তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে উন্নত চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিএনপি এটিকে রাজনীতিকরণ করতে চাইছে। তারা মনে করছে, খালেদার লাশের ওপর তারা আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবে।
কিন্তু সেই স্বপ্ন তাদের কখনোই পূরণ হবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা এজন্যই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং দলের নেতাকর্মীরা যেন সতর্ক ও সজাগ থাকেন।
অন্যদিকে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে তৈরি বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার পরিষদে কর্মসূচিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, এই দলটির সঙ্গে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এজন্য তাদের নিয়ে বাড়তি সতর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগ।
সবমিলিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বিরোধী শিবিরের কর্মসূচি মোকাবিলা করতে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এইচএন