কথায় নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ বাস্তবায়ন জরুরি
Share on:
দুর্নীতি সমাজের ভয়াবহ মহামারি। এটি রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে। তাই দুর্নীতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। শুধু কথায় নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীল (জিরো টলারেন্স) নীতির বাস্তবায়ন জরুরি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ)’ আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’। শীর্ষক সেমিনারে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে এখন অনেক চাটার দল। চাটার দলের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার, এলকপের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল প্রমুখ।
ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বাধাগ্রস্ত করে না। বৈষম্য ও দারিদ্র্যকেও বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতির প্রধান কারণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। তিনি বলেন, দুর্নীতি রোধে দেশে নীতি আছে; কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা বলার সময় ঠিকই বলছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। ফলে একজন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার তাকে দেখে অন্যরা দুর্নীতি করার সাহস পাচ্ছে। এ কারণেই দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। এ দুর্নীতিবাজদের রুখতে দুষ্টচক্রকে (সিন্ডিকেট) চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সব নাগরিকের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও দেশের ন্যায়সংগত অগ্রগতি নিশ্চিতে অবশ্যই শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন জরুরি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্নীতি সমাজের মূল ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে ফেলে। এ মহামারী মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সংসদে বলেছেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছেন। আমাদের উচিত তার এ নীতি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘বাংলার কৃষক ও শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে শিক্ষিত ব্যক্তিরা।’ আমরাই এই শিক্ষিত সমাজের অংশ। সুতরাং আমাদের উচিত দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। জবাবদিহি নিশ্চিত করে তাদের শাস্তির সম্মুখীন করা। এতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক, চাষি ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এই দুর্নীতিবাজদের জায়গা হতে পারে না।
ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়েছেন। আবার প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো, লোকবল ও সুনাম ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছেন। এক্ষেত্রে কখনো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে আবার কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদন ছাড়াই তার অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন। আর ড. ইউনূস নিজেই এসব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসাবে কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের অর্থে প্রতিষ্ঠিত। একদিকে তিনি সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলছেন, অন্যদিকে দরিদ্র জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদের বঞ্চিত করছেন। এ কারণে গ্রামীণ ব্যাংক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্নীতির বিরূদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্রদের সম্পদ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন কোনো ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দুর্নীতিবাজ যেই করুক, তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
এমএইচ