করোনা পরীক্ষায় উদাসীনতা, টাকায় মিলছে সনদ
Share on:
চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা চেকপোস্টে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা চেকপোস্টে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
নমুনা পরীক্ষা না করেও ভারত ফেরত যাত্রীদের টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে টাকা নিলেও তার রশিদ দিচ্ছে না চেকপোস্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে ভারত থেকে দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন এক নারী। কিন্তু হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই ১০০ টাকার বিনিময়ে তাকে করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়া হয়।
আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) বিষয়টি জানাজানি হলে শুরু হয় সমালোচনা। চেকপোস্টে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
করোনা পরীক্ষায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উদাসীনতায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তার নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
চেকপোস্টে ঢুকেই যাত্রীদের করোনার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার কথা। প্রতিজনের কাছ থেকে সে অনুযায়ী নেয়ার কথা ১০০ টাকা করে। তবে অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে রশিদ দেয়া হয় না।
বেশি টাকা নেওয়ারও রয়েছে অভিযোগ। আবার টাকা নিয়েও করা হয় না নমুনা পরীক্ষা। সবমিলিয়ে একরকম হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি।
দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত থেকে দেশে ফেরেন বাংলাদেশি নাগরিক কুষ্টিয়ার রেখা রানী সাহা। সীমান্ত পেরিয়ে চেকপোস্টে ঢুকেই স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ছিল তার।
কিন্তু তা করা হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। বিনিময়ে নেয়া হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা।
রেখা রানী সাহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভারতের গেটে চেকপোস্ট দিয়ে দর্শনা চেকপোস্টে ঢোকার পর আমার কোনো নমুনা পরীক্ষা করেনি স্বাস্থ্যকর্মীরা।
আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা না করেই করোনা নেগেটিভ সনদ দেয় তারা। আমার কাছে টাকা নিয়েও কোন রশিদ দেয়নি তারা। আমার সামনে আরও কয়েকজনের সঙ্গে এমন করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, তালিকায় রেখা রানী সাহার নামই নেই। তাহলে কিভাবে পেলেন করোনার নেগেটিভ সনদ, প্রশ্ন ছিল দায়িত্বরতদের কাছে।
তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এসব অনিয়ম মানতে নারাজ। তারা বলছেন, দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতেই হবে। দেশে ঢুকেও পরীক্ষার যে বিধি তাও মানা হচ্ছে।
দর্শনা চেকপোস্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) জামাত আলী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, যাত্রীদের অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে রেখা রানী নমুনা না দিয়েই চলে গেছেন।
আবার অনেক সময় ভীড়ের কারণে অনেক রসিদ দেয়া হয় না। দু’একটা এড়িয়েও যেতে পারে। মূলত ক্যান্সার, স্কিন, হার্টের রোগী ও ১২ বছরের নিচে যারা ইমিগ্রেশনে আসেন তাদের ইমিগ্রেশনের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর।
বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে দর্শনা চেকপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আব্দুল আলীম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিনেই ভারত ফেরত ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১১ বাংলাদেশি এবং ১৩ ভারতীয় নাগরিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রবেশের অনুমতি মিললেও ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া হয়নি প্রবেশের অনুমতি। তাদেরকে ভারতে ফিরে যেতে হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারতে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক যাত্রীর করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ভারতের কোনো যাত্রী করোনা পজিটিভ হলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দেশের কোনো যাত্রী পজিটিভ হলে তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নমুনা না নিয়ে করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়ার বিষয়টি স্পর্শকাতর ও দুঃখজনক।
এভাবে চলতে থাকলে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এইচএন