প্রাণ বাঁচাতে পরিত্যক্ত কারাগারে ফিলিস্তিনিরা
Share on:
ইসরাইলি সেনাদের লাগাতার হামলায় বিধ্বস্ত গাজা। টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামার কোনো নাম নেই। ইতোমধ্যেই খাদ্য, পানি ও জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের চরম সংকটে দিন পার করছেন অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা।
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আশ্রয়স্থল। এরই মধ্যে নতুন করে আবারও গাজা শহরের ৮০ শতাংশ জায়গা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। আবারও গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুসে অবিরত স্থল অভিযান চালাচ্ছে তারা। চলছে অবিরত বোমাবর্ষণ। পালাবার সুযোগটুকুও নেই। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। প্রাণ বাঁচাতে তাই পরিত্যক্ত কারাগারেই আশ্রয় নিচ্ছেন অসহায় ফিলিস্তিনিরা। আলজাজিরা, রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাদের হামলা ও বোমাবর্ষণের মধ্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ের জন্য নতুন নতুন জায়গা খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অনেক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিচ্ছেন পরিত্যক্ত কবরস্থানে এবং কারাগারে। অথচ এই কারাগার তৈরি করা হয়েছিল খুনি ও চোরদের আটকে রাখার জন্য।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাদের হামলা ও বোমা থেকে বাঁচতে পরিত্যক্ত কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশ ফিলিস্তিনি। সেখানে থাকা ইয়াসমিন আল-দারদেশি নামে এক নারী এ তথ্য জানিয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুস থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর পরিত্যক্ত কারাগারটিতে আশ্রয় নেয় ইয়াসমিন আল দারদেশির পরিবার। তিনি জানিয়েছেন, তার পরিবার তিন দিন একটি গাছের নিচে কাটিয়েছেন। এখন তারা খান ইউনুসের কেন্দ্রীয় সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মসজিদে থাকেন। এখানে তারা সূর্যের প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পাওয়া ছাড়া আর তেমন সুবিধা পাচ্ছেন না।
ইয়াসমিনের স্বামীর কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। অসুস্থ এ মানুষটি কোনো ধরনের লেপ ও তোশক ছাড়াই থাকছেন। এখান থেকেও বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এই নারী ও তার পরিবার। আলজাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কোনো জায়গা খালি না থাকায় কবরস্থানেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য, পানি, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের চরম সংকটে দিন যাপন করছে তারা। দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়।
ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুস শহর থেকে মাত্র চার দিনে এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ওসিএইচএ গত আরও জানায়, আগে এই এলাকাটিকে নিরাপদ মানবিক এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হলেও গত সোমবার ইসরাইলি সেনারা এখানকার অধিবাসীদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরই আতঙ্কগ্রস্ত মানুষেরা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে। এদিকে শুক্রবার দেইর-এল বালাহ থেকে আলজাজিরার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ইসরাইলের বিমান হামলায় খান ইউনুসে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এনএইচ