সাকিবসহ বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে সেরা যারা
Share on:
শুরু হয়েছে বিশ্বকাপের ডামাডোল। বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামবে কানাডা। এবারের আসর শেষ হবে ২৯ জুন ফাইনালের মধ্যদিয়ে। প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি হবে বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে পেছন ফিরে তাকালে চোখ ভাসবে রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়।
২০০৭ সাল থেকে ২০২২— এই আট আসরের বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই রোমাঞ্চ, উন্মাদনা যেমন ছিল, তেমনি ছিল আফসোস, বেদনাও। এসবের মধ্যে ব্যাট হাতে মুগ্ধ করেছেন এমন ব্যাটারকে নিয়েই এই আয়োজন। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বিগত আট আসরেরই খেলেছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও ভারতের তারকা ব্যাটার রোহিত শার্মা।
তবে এই দুই তারকার কেউই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা হতে পারেননি। অপরদিকে ২০১২ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বিরাট কোহলি নিজেকে নিয়েছেন সবার ওপরে। ২০১৪ সালে অবসর নেওয়া মাহেলা জয়াবর্ধনে আছেন দ্বিতীয় স্থানে। এছাড়া সেরা পাঁচে আছেন ক্রিস গেইল, তিলকরত্নে দিলশানের মতো কিংবদন্তি ব্যাটার।
এবার তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে রোহিত, সাকিব ও জস বাটলারদের সামনে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান সংগ্রহদের মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে সবার ওপরে আছেন সাকিব। ৩৬ ইনিংসে ৭৪২ রান করেছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা দশ রান সংগ্রাহক
১. বিরাট কোহলি, ভারত (২০১২-২০২২)
বিশ্বকাপ মানেই যেন ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলির আধিপত্য। হোক ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি— কোহলি থাকেন দারুণ ছন্দে। ২০১৪ সালের পর ২০২২ বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। এছাড়া কোহলির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ২০১২ সাল থেকে ২০২২ বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন। তাতে ১১৪১ রান করেছেন ভারতীয় তারকা, গড় ৮১.৩৩! কোহলির স্ট্রাইক রেট ১৩১.৩০। কোহলি সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৪টি, সর্বোচ্চ ৮৯*।
২. মাহেলা জয়াবর্ধনে, শ্রীলঙ্কা (২০০৭-২০১৪)
শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তির টি-টোয়েন্টি অধ্যায় শেষ হয়েছে সেই ২০১৪ সালে। অর্থাৎ বিশ্বকাপের পাঁচটিতে খেলেছেন লংকান এই তারকা। ২০১৬ সালের পর বিশ্বকাপে খেলেননি তিনি। তবুও রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে জয়াবর্ধনের ব্যাট বুঝি একটু বেশিই চওড়া হচ্ছিল! ক্যারিয়ারের একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন বিশ্বকাপেই। মোট ৯টি হাফ সেঞ্চুরির ৫টিই করেছেন বিশ্বকাপে। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ত্রিশের কিছু বেশি, বিশ্বকাপে সেটা চল্লিশের কাছাকাছি।
৩. ক্রিস গেইল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ(২০০৭-২০২১)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন গেইল। দানবীয় ব্যাটিংয়ের কারণে এই ফরম্যাটের ফেরিওয়ালা বলা হয় ক্যারিবিয়ান তারকাকে। বিশ্বকাপেও নিজের ছাপ রেখেছেন গেইল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একাধিক সেঞ্চুরির মালিক গেইল (২টি)। আগের সাতটি বিশ্বকাপেই খেলা ক্যারিবিয়ান দানব সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে খেলেছেন মোট ৩৩টি ম্যাচ। যাতে ৩১ ইনিংস ব্যাটিং করে ৯৬৫ রান করেছেন। সেঞ্চুরি দুটি, হাফ সেঞ্চুরি ৭টি। গড় ঠিক ৩৪.৪৬, স্ট্রাইক রেট ১৪২.৭৫।
৪. রোহিত শর্মা, ভারত (২০০৭-২০২২)
হিটম্যান খ্যাত রোহিত শর্মা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সাবলীল ব্যাটিং স্ট্রোক ও ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি বিখ্যাত। রোহিত সময়ের উপর দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ রাখেন এবং দীর্ঘ ইনিংস খেলতে পারেন, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিরল গুণ। এই কারণেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত। আগের আটটি বিশ্বকাপেই খেলা এই তারকা বিশ্বকাপে খেলেছেন মোট ৩৯টি ম্যাচ। যাতে ৩৬ ইনিংস ব্যাটিং করে ৯৬৩ রান করেছেন। রোহিত সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৯টি, সর্বোচ্চ ৭৯*। গড় ৩৪.৩৯, স্ট্রাইক রেট ১২৭.৮৮।
৫. তিলকরত্নে দিলশান, শ্রীলঙ্কা (২০০৭-২০১৬)
২০১৬ সালের সর্বশেষ বিশ্বকাপের পরপরই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন দিলশান। তার আগে এই ফরম্যাটে সবকিছুই জিতেছেন। শ্রীলঙ্কার ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান দিলশানের। ২০১৬ সালেও বেশ ভালো খেলেছেন লঙ্কান তারকা। ছয়টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৩৫ ম্যাচ খেলা দিলশান ৩৪ ইনিংস ব্যাটিং করে ৮৯৭ রান করেছেন। অল্পের জন্য বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পাননি, অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। অর্ধশতক করেছেন ৬টি। দিলশান এই রান তুলেছেন ৩০.৯৩ গড় ও ১২৪.০৬ স্ট্রাইক রেটে।
৬. ডেভিড ওয়ার্নার, অস্ট্রেলিয়া (২০০৯-২০২২)
ডেভিড ওয়ার্নার, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষুদ্রাকার বীর, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার কর্মজীবন শুরু করেন একজন ধূর্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে। আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ফোরক টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের একজন। আক্রমণাত্মক স্ট্রোক খেলার পাশাপাশি ঘন ঘন স্ট্রাইক রোটেশন করার ক্ষমতা তাকে তার দলের একজন অমূল্য সম্পদ করে তুলেছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সংক্ষিপ্ততম এই সংস্করণে ওয়ার্নারের অর্জন অসাধারণ। আগের সাতটি বিশ্বকাপে খেলা এই অজি তারকা মোট ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন। যাতে ৩৪ ইনিংস ব্যাটিং করে ৮০৬ রান করেছেন। ওয়ার্নার সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৬টি, সর্বোচ্চ ৮৯*। গড় ২৫.১৮, স্ট্রাইকরেট ১৩৩.২২।
৭. জস বাটলার, ইংল্যান্ড (২০১২-২০২২)
বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের তালিকা করলে বর্তমান সময়ের সেরা দশের একজন ইংল্যান্ডের তারকা ওপেনয়ার জস বাটলার। পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা এই তারকা নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন ১টি বিশ্বকাপ শিরোপা। এছাড়া বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সেরা দশে। আগের ৫টি বিশ্বকাপে খেলা এই ইংলিশ তারকা মোট ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন। যাতে ২৭ ইনিংস ব্যাটিং করে ৭৯৯ রান করেছেন। বাটলার সেঞ্চুরি পাননি ১টি, অর্ধশতক করেছেন ৪টি, সর্বোচ্চ ১০১*। গড় ৪২.০৫, স্ট্রাইক রেট ১৪৪.৪৮।
৮. সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ (২০০৭-২০২২)
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বিগত আট আসরেই খেলেছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপ এলেই ব্যাট-বল হাতে জ্বলে ওঠেন এই তারকা। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে সেরা দশে নিজেকে নিয়েছেন তিনি। আগের আটটি বিশ্বকাপেই খেলা এই টাইগার অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে খেলেছেন মোট ৩৬টি ম্যাচ। যাতে ৩৬ ইনিংস ব্যাটিং করে ৭৪২ রান করেছেন। সাকিব সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৩টি, সর্বোচ্চ ৮৪। গড় ২৩.৯৩, স্ট্রাইক রেট ১২২.৪৪।
৯.এবি ডি ভিলিয়ার্স, দক্ষিণ আফ্রিকা (২০০৭-২০১৬)
‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’ খ্যাত, ক্রিকেট বিশ্বের একজন সুপারহিরো এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার অসাধারণ টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের কারণে তিনি সহজেই বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের শট খেলার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এবি বেশ কিছু অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছেন। ২০১৫ সালে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ভেঙেছিলেন। ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা এই তারকা খেলেছেন মোট ৩০টি ম্যাচ। যাতে ২৯ ইনিংস ব্যাটিং করে ৭১৭ রান করেছেন। ডি ভিলিয়ার্স সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি, সর্বোচ্চ ৭৯*। গড় ২৯.৮৭, স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৪০।
১০. কেন উইলিয়ামসন, নিউজিল্যান্ড (২০১২-২০২২)
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের সঙ্গে মানানসই ক্রিকেটারের ওপরই ভরসা রাখছে সবাই। দ্রুত রান তুলতে পারে এমন ব্যাটার কিংবা ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে এমন বোলাররাই যেকোনো দলের পরিকল্পনার মূল অংশ। কিন্তু ব্যতিক্রম এক জায়গায়, নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াডে। কেননা টেস্ট-ওয়ানডে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও বিশ ওভারের খেলায় অনেকটাই বিবর্ণ উইলিয়ামসন। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরিসংখ্যান হাসছে তার ব্যাটে।
কেননা সেরা দশ রান সংগ্রহে নিজেকে নিয়েছেন তিনি। পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা এই তারকা খেলেছেন মোট ২৫টি ম্যাচ। যাতে ২৪ ইনিংস ব্যাটিং করে ৬৯৯ রান করেছেন। উইলিয়ামসন সেঞ্চুরি পাননি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৩টি, সর্বোচ্চ ৮৫। গড় ৩৩.২৮, স্ট্রাইক রেট ১১৩.৮৪।
এনএইচ