tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
সারাদেশ প্রকাশনার সময়: ২৩ অগাস্ট ২০২৪, ০৯:২১ এএম

আনন্দ মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ মনিরুল, অভাব-অনটনে দিন কাটছে পরিবারের


monirul-20240823091508

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন পটুয়াখালী ইসাহাক মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম (১৯)।


আনন্দ মিছিলে পুলিশের গুলিতে পিঠে গুলি লাগে মনিরুলের। এরপর থেকে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। বাবার অসুস্থতায় পড়াশোনার পাশাপাশি সীমিত বেতনে সেলসম্যানের চাকরি করতেন মনিরুল। তার বেতনের টাকাতেই চলত পরিবার। বর্তমানে মনিরুল চিকিৎসাধীন থাকায় অভাব-অনটনে দিন কাটছে তার পরিবারের।

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, মনিরুল পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের ৪৫ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

মনিরুল পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের ঠ্যাংগাই গ্রামের মোতালেব হাওলাদারের ছেলে। তিনি পটুয়াখালী এসহাক মডেল ডিগ্রি কলেজের ২০২৫ ব্যাচের দ্বাদশ শেণির শিক্ষার্থী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অভাব অনটনে বড় হওয়া একমাত্র ছেলে সন্তান মনিরুল পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরতে গত মে মাসে ঢাকা মিরপুর-১ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের আজাত এন্টারপ্রাইজে সেলসম্যান হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে পরিবারের খরচ বহন করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দিয়ে নেমেছিলেন রাজপথে।

টানা কয়েকদিন আন্দোলনের পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে মিরপুর-১ থেকে মিরপুর-২ নম্বর পর্যন্ত আনন্দ মিছিল বের হয়। এতে যোগ দেন মনিরুল। মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। আশপাশের কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে মনিরুল পেছনে ফিরে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই তার বাম পাঁজরে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ মনিরুলকে উদ্ধার করে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তী সময়ে মনিরুল গত ৭ আগস্ট বিকেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পর, গুলিবিদ্ধ মনিরুলের চিকিৎসার সব খরচ বহন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গুলিবিদ্ধ মনিরুল বলেন, টানা কয়েকদিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা খুশিতে বিজয় মিছিল নিয়ে মিরপুর-২ এর কাছাকাছি গেলে পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। পিঠে গুলি লাগার পর আমি মাটিতে পড়ে যাই। পরে কয়েকজন ছাত্র ভাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি বিজয় মিছিলে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি, সেটির বিচার চাই।

মনিরুলের বাবা মোতালেব হাওলাদার বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এহন ইনকাম করতে পারি না। এই ছেলের টাকায়ই সংসার চলে। গুলি খাইয়া পোলাডায় প্রায় ১৬/১৭ দিন যাবত হাসপাতালে। এ মাসে বাজারও হয় নাই। বিয়ার লাক দুইডা মাইয়া ঘরে, কী করমু বুঝতে পারতেছি না। সরকার যদি আমার পোলাডারে একটা কাম কাইজের ব্যবস্থা কইরা দেতে, তাহলে কয়ডা ডাইল ভাত খাইয়া বাঁচতে পারতাম।

মনিরুলের চিকিৎসার ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, তিনি গত ৭ আগস্ট থেকে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বর্তমানে তিনি আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। আমরা যখন জানতে পারি তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আমরা তখন তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ ফ্রি করে দিয়েছি। হাসপাতালে থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওনার ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এনএইচ