ফের জলমগ্ন সিলেট, ওসমানী মেডিকেলে আতঙ্ক
Share on:
ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরীতে হুট করেই ফের জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে নগরের অনেক এলাকায় জলমগ্ন হয়ে আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শনিবার (৮ জুন) রাত ৯ টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ভবন। একই সঙ্গে হাসপাতালের ২৬, ২৭নং ওয়ার্ড রয়েছে ঝুঁকিতে। ছুঁই ছুঁই করছে পানি। যে কোনো সময় পানিতে ভেসে যেতে পারে নিচতলার ওয়ার্ডগুলো। হাসপাতালের ২৬-২৭নং ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা আতঙ্কে আছেন। যে কোনো সময় তাদের এ ওয়ার্ডে পানি উঠে ব্যাহত হতে পারে চিকিৎসা সেবা।
ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এছাড়াও নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জিন্দাবাজার, পাঠানটুলা, উপশহর, জল্লারপাড়, শেখঘাট,কালিঘাট, তেররতন, দরগাহ মহল্লা, জালালাবাদ, তালতলা, জামতলা, মিরের ময়দান, তোপখানা, খাস্তবি, সুবিদবাজার, মিরাবাজার, সোবাহানিঘাট, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
নগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ির ভেতরেও পানি ডুকে যায়। আসবাপত্র অনেকেই তড়িঘড়ি করে সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। আকস্মিকভাবেই এমন পরিস্থিতিতে পড়ায় অনেকের মালামালের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ৩ মিলিমিটার এবং ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নগরের ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা সুমন আহমেদ বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই আমার বাসাসহ ঘাসিটুলা এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সড়কে হাঁটু সমান পানি জমেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘরবন্দি অবস্থা। গত সপ্তাহেই দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠলাম। আবারও এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
জিন্দাবাজার রাজা ম্যানশনের আহবাব বলেন, নগরীর কেন্দ্রীয় জায়গা হচ্ছে জিন্দাবাজার। এই অল্প সময়ের বৃষ্টিতে আমরা জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছি। সুষ্ঠু নগরায়ন সময়ের দাবি।
সুবিদবাজারের সুমন দাস বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটসহ বাসাতে পানি ডুকে গেছে। আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তিনি বলেন সিলেটের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত হাউজিং স্টেইট এলাকাতে খুবই অল্পসময়ে এই জলাবদ্ধতা আমাদের উন্নয়নের অন্তরায়। সিলেট মহানগরী এইভাবে অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে। কি ভয়ংকর অবস্থা! নগর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের উচিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা।
এর আগে গত ২ জুন রাতে ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় নগরের শতাধিক এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
তখনও পানি ঢুকে পড়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও। ডুবে গেছে কয়েকটি প্রধান সড়ক। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দেন নগরবাসী। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।
এর আগে গত ২৯ মে এক রাতের ঢলে তলিয়ে গিয়েছিলো সিলেটের পাঁচ উপজেলা। তবে কয়েকদিন আবহাওয়ার উন্নতির ফলে কমছিলো পানি। শনিবার জেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার কিছুটা ওপরে অবস্থান করলেও আর সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।
জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অধিকাংশ লোকজন নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে গেছেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জেলার ৫৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৪০ জন অবস্থান করছিলেন। এরমধ্যে শনিবার রাতের বৃষ্টিতে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
এনএইচ