tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৩৭ পিএম

রিজার্ভ নামলো ২০ বিলিয়ন ডলারে


ডলার

প্রবাসী আয় কম, আশানুরূপ রপ্তানি আয় না আসা ও বিদেশি ঋণ কমে যাওয়ার বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে পড়েছে দেশে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে দায় মেটাচ্ছে সরকার। এতে করে ধারাবাহিক কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে রিজার্ভ।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ নিয়মে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের ১৩ জুলাই। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৫৬ কোটি) ডলার। তবে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বুধবার (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৯৫ কোটি ৭৮ লাখ) ডলার। তার মানে, তিন মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ ১৮ অক্টোবর কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি (২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন) ডলার। আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯৫ কোটি ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, প্রকৃত রিজার্ভ কত আছে এটা জানা নেই। তবে আমরা যেটা প্রকাশ করি সেই তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বিপিএম-৬ হিসাবে এখন ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। আইএমএফ এর ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল চলতি বছরের জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। কিন্তু গত দুই প্রান্তিকে তা অর্জন করতে পারেনি, ডিসেম্বরেও তা পারবে না। দেশে এখন ডলারের তীব্র সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমঝোতার মাধ্যমে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় পেতে পারে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফের পর্ষদ সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মি‌লিয়ন (৬৮ কো‌টি ১০ লাখ মা‌র্কিন ডলার) ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের সঙ্গে তাদের অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ বোর্ড মিটিং তা অনুমোদন করবে।

মুখপাত্র বলেন, আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত ছিল। এর ম‌ধ্যে ৬টি শর্ত নি‌য়ে কাজ ক‌রে‌ছি আমরা। শ‌র্তের বেশ কিছু পূরণ হ‌য়ে‌ছে। কিছু পূরণ হয়‌নি। ত‌বে শেষ বৈঠ‌কে উভয়পক্ষ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হ‌য়ে‌ছে। তিনি জানান, আমাদের প্রস্তাবে তারা রাজি হয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আগামী ডিসেম্বরে পেতে আমরা আশাবাদী।

আইএমএফের মিশনের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে এই সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকার ঋণ কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা সম্পন্ন করার বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে। এতে বলা হয়, প্রথম পর্যালোচনা সম্পন্ন হওয়ার পর এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি বা বর্ধিত ঋণ তহবিল (ইসিএফ) ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় ৪৬ কোটি ২০ লাখ আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণ ছাড় হওয়ার কথা। অর্থাৎ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে মোট ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় হতে পারে।

এমআই