tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
শিক্ষা প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি


Untitled-1

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অবৈধ চেয়ারম্যান দখলদার ইউসুফ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য ইসলামিক সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন।


রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে নর্দান ইসলামিক জনের ব্যানারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জানা গেছে, এই সেমিনার আয়োজনের ক্ষেত্রে সিএসই বিভাগের প্রধান রায়হানুল মাসউদ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগের ক্যাডার ও বর্তমানে আওয়ামীলীগ নেতা। এছাড়াও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর জুলাই বিপ্লবের তীব্র বিরোধিতাকারী, যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র হত্যাসহ পঞ্চাশের অধিক মামলার আসামি, আওয়ামীলীগ আমলের দখলদার, সাবেক আইজিপি বেনজিরের সহযোগী প্রফেসর আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ এটাকে একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে। যদিও তিনি এখন পরিবারসহ পলাতক তবে তার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্বে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করছেন সিএসই বিভাগের প্রধান রায়হানুল মাসউদ। তিনি বুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার। যিনি কিনা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরেও আস্ফালন করে বলতেন আমি ছাত্রলীগ করতাম এবং এখনো আ.লীগের নেতা আমি সব ম্যানেজ করবো।

এই প্রচণ্ড ধর্মবিদ্বেষী ছাত্রলীগ ক্যাডার কেন এরকম একটি ইসলামিক সেমিনার আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে গেলেন তা নিয়ে চলছে ব্যাপক কৌতূহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের মতে এই আয়োজনের মাধ্যমে রায়হানুল মাসউদ একসাথে কয়েকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান।

প্রথমত : এই সেমিনারের মাধ্যমে চরমপন্থি ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা ও দেশে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি যা বর্তমানে আওয়ামী এজেন্ডার অন্যতম লক্ষ্য।

দ্বিতীয়ত : ইউসুফ আব্দুল্লাহর জুলুমের ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মনোযোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা।

তৃতীয়ত : নিজের আওয়ামী দুর্গন্ধকে আড়াল করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এসব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য একই বিভাগের আরেকজন শিক্ষক সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী শামসুদ্দোহা আলম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শহীদ তার সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।

সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের যেসব ক্যাডার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদেরকে হত্যা চেষ্টার সাথে ও হুমকি ধামকির সাথে জড়িত ছিল নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সবাইকে পুনর্বাসিত করেছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বর্তমান অবৈধ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ভূমি খেকো ইউসুফ আবদুল্লাহর ডান হাত হিসেবে পরিচিত রায়হানুল মাসউদ। তার দাপটে সাধারণ শিক্ষক শিক্ষিকা তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি পর্যন্ত অসহায় বলে জানা গেছে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সীমান্তকে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচণ্ড বিক্ষোভের মুখ থেকে এই রায়হানুল মাসউদই রক্ষা ও পুনর্বাসন করেছেন বলে জানা যায়। এই সীমান্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদধারী ক্যাডার ছিলেন ও তিনি জুলাই আগস্ট আন্দোলনের শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ছিলেন খড়গ হস্ত। যিনি কিনা প্রকাশ্যে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন।

  • রায়হানুল মাসউদের উত্থান যেভাবে

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ধারক আব্দুল্লাহর ছেলে পলাতক সাদ আল জাবের আব্দুল্লাহকে অনলাইনে বিদেশী ডিগ্রী পাইয়ে দেওয়ার কৌশলী হিসেবে রায়হানুল মাসুদের সাথে ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের সখ্যতার গোড়াপত্তন। এরপর করোনা মহামারি শুরু হলে তা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। সেই সময় রায়হান শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন কর্তন ক্ষেত্র বিশেষে বেতন না দিয়ে মাসের পর মাস কাজ করিয়ে নেওয়ার যে পদ্ধতি সেটির আবিষ্কারক হিসেবে চেয়ারম্যানের বিশেষ সুনজরে আসেন। এছাড়াও করোনা কালীন শিক্ষকদের কোর্স লোড বাড়িয়ে ১৫ ক্রেডিট থেকে ১৮ ক্রেডিট করা ও দুই তিনটি সেকশনের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একটি সেকশনে আনয়নসহ জুলুমের সমস্ত কারিগর হিসেবে এই রায়হানুল মাসউদ ফ্যাসিস্ট চেয়ারম্যানের চূড়ান্ত আনুকূল্য লাভ করেন।

একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেতন বৃদ্ধি হলেও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যতিক্রম। কিছুদিন আগে বেতন বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকরা একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করলে এই রায়হানুল মাসউদ তার বিভাগের শিক্ষকদের সবাইকে একদিনে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন এবং বলেন প্রয়োজনের সমস্ত শিক্ষককে বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, যে তার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে যা যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন।

জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের সময় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ শাহাদাত বরণ করেছেন। সেই শহীদ আসিফকে আওয়ামী দোসর ইউসুফ আব্দুল্লাহ, তার ছেলে-মেয়ে, এবং এই রায়হানুল মাসউদ তাদের কুকীর্তি ঢাকার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা অমার্জনীয়।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি লুৎফুর রহমান সানি ও বোরহানউদ্দিন ক্যাম্পাসে ভিসির সাথে সাক্ষাতে গেলে রায়হানুল মাসউদের নেতৃত্বে ভাঙচুর চালিয়ে তাদের উপরে অভিযোগ করে যৌথ বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এছাড়াও ইউসুফ আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে জমি দখল, দলিল জালিয়াতি, ছাত্র হত্যা ও টাকা বিদেশে পাচারসহ যে একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার প্রত্যেকটি অভিযোগের একান্ত সহযোগী এই রায়হানুল মাসউদ।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বললে তারা দাবি করেন, এই মুহূর্তে সরকারের উচিত প্রশাসক বসিয়ে, নতুন ভিসি ও প্রভিসি নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। একাধিক অভিভাবক এ বিষয়ে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ও ইতিমধ্যে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভর্তি বাতিল ও ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এফএইচ