এবার নির্বাচন নিয়ে এত উতলা কেন আমেরিকা, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
Share on:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নির্বাচন নয়, তাদের উদ্দেশ্য অন্যকিছু। তিনি বলেন, হঠাৎ এবার নির্বাচন নিয়ে যেন তারা খুব বশি উতলা হয়ে পড়ল, তাদের লোকজন আসা শুরু করল, কেন, কারণটা কী?
বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তৎপরতার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যখন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল তখন তাদের নির্বাচনের চেতনা কোথায় ছিল? জেনারেল এরশাদ যখন ৪৮ ঘণ্টা রেজাল্ট বন্ধ করে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করল, সেটা নিয়ে তাদের উদ্বেগ তো আমরা দেখিনি। হঠাৎ এবার নির্বাচন নিয়ে তারা (আমেরিকা) যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল! নির্বাচনের দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায়, কী, কীভাবে হবে, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা... এবং একের পর এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কী? বিএনপি তাদের চোখের মণি? যে বিএনপি এত মানুষ হত্যা করেছে, জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত; যে বিএনপি কয়দিন আগেও আগুন দিয়ে, অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করল; কিছুদিন আগেও পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করল; এ দেশে একটা পর একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল তারা; আজকে তাদের নিয়ে মাতামাতি? তাদের সঙ্গে বসতে হবে? তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে? অনেক বলেছি। শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য, অনেক কিছু সহ্য করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থার দিক দিয়ে বাংলাদেশের একদিকে ভারত মহাসাগর অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। এদিকে আমাদের বে অব বেঙ্গল। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এ জায়গাতে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। ভারত মহাসাগরের যতগুলো দেশ আছে, কারো সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন হয়।
খালেদা জিয়া যখন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল তখন তাদের নির্বাচনের চেতনা কোথায় ছিল? জেনারেল এরশাদ যখন ৪৮ ঘণ্টা রেজাল্ট বন্ধ করে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করল, সেটা নিয়ে তাদের উদ্বেগ তো আমরা দেখিনি। হঠাৎ এবার নির্বাচন নিয়ে তারা যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল!
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের নাম দিয়ে, নির্বাচনের নাম দিয়ে, নানা নাম দিয়ে আমাদের দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের জায়গাটা তারা ব্যবহার করতে পারে। এটা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা, এটাই হচ্ছে কারো কারো উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এত তালবাহানা। এই এলাকাটাকে নিয়ে নানাভাবে খেলার চক্রান্ত চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এরা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
সরকারপ্রধান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩০ বছর ধরে যে সংঘাত ছিল, আমি সরকারে আসার পর সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানে এখনও নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। যেহেতু আমি জানি, আমি বুঝি, আমাকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাবে, তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, তাদের বসিয়ে এ জায়গাটা নিয়ে খেলবে, এটাই তাদের প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। যারা দেশপ্রেমী, তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। খালেদা জিয়ার আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন না। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তারা নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। তখন এসব চেতনা আমরা দেখিনি। এত কথা শুনিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন মনে হয় তাদের পছন্দ না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাটাই পছন্দ না। আজকের ডেমোক্রেসির কথা বলে, ডেমোক্রেসি কী? আমি আমেরিকা যখন গিয়েছিলাম, তখন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি একটা লেখা দেখে এসেছি, যেখানে লেখা, গর্ভমেন্ট অব দ্যা পিপল বাই দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপল। আমি একটা দেশ থেকে এসেছি, যেখানে একটা গর্ভমেন্ট অব দ্যা আর্মি, বাই দ্যা আর্মি, ফর দ্যা আর্মি। আপনারা তাদের সাপোর্ট দেন কীভাবে? আপনাদের গণতন্ত্র কি আটলান্টিকের পার পর্যন্ত থাকে? আটলান্টিক পার হলেই আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বদলে যায়? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের দেশে এত নেতাকর্মীদের হত্যা করল, শুধু একবার নয় বারবার আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজকে তাদেরকেই ক্ষমতা বসাতে হবে?
তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসেই জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার, সৈনিককে হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ক্যু হলে, কোনো বিচারই হয়নি, বিচারের রায়ের আগেই সে ফাঁসি দিয়েছে। এমনও দিন গেছে একদিনে ১০ জন করে ফাঁসি দিয়েছে। জেলে গেলেই ফাঁসি। সবাইকে তো জেলে নিয়েছে তা না, বিভিন্ন ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করেছে। বিমান বাহিনীর ৬ শতাধিক অফিসারকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর দুই হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে হত্যা করেছে। এভাবেই বাংলাদেশ চলছিল। বাংলাদেশের মানুষের কি অধিকার ছিল? না ছিল ভোটের অধিকার, না ছিল কথা বলার অধিকার। ২১টা বছর এদেশে মানুষ এভাবেই চলে।
তিনি বলেন, জিয়ার রাষ্ট্র পরিচালনার পথ অনুসরণ করে ক্ষমতায় আসে এরশাদ। এরশাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করি। তারপর খালেদা জিয়ার সেই জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসল। জামায়াতের উত্থান জিয়াউর রহমানের হাতেই। জামায়াত ছিল যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, জামায়াতের লোকজনই পাকিস্তানি বাহিনীদের গ্রামের পথ দেখিয়ে গ্রামে নিয়ে যায়। মা বোনকে ধরে তাদের হাতে তুলে দেয়। স্বাধীনতার পর আমাদের সংবিধানে জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধী বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না। তাদের দল করার অধিকারও ছিল না। তারা অনেকে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। কেউ বিদেশে চলে যায়। আর যারা দেশে ছিল তারা সর্বহারা পার্টিতে মিশে যায়। ছাত্রলীগ ভেঙে জাসদের সৃষ্টি হয়, ওরা জাসদের সঙ্গে যুক্ত হয়। যতদিন পিতা বেঁচে ছিলেন জাসদ যত প্রোগ্রাম করত, বড় বড় মিটিং করত, তাদের টাকা পয়সার অভাব হত না। যেই ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো তখন তাদের গুরুত্ব কমে গেল। তখন তাদের লোকও নেই, অর্থ নেই।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তাদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা আমাদের শুনতে হয়। আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? যেখানে আমার মা-বাবার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করার অধিকার ছিল না। ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে কত বড় একটা দুর্ভাগ্যের ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে, যে মুক্তিযুদ্ধের জন্য লাখো মানুষ জীবন দিয়েছে, সেই মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত আদর্শ, সমস্ত চেতনা, সবকিছু পরিবর্তন করে ফেলেছিল তারা।
এমবি