বিএসএমএমইউয়ে আবারও উত্তেজনা, ভিসিপন্থিদের মারধর
Share on:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এডহকে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের উপাচার্যের শেষ মেয়াদে স্থায়ীকরণ নিয়ে চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি শরফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষের মুহূর্তে তার ব্যক্তিগত সহকারী ডা. রাসেল আহমেদ ও শিপনসহ কয়েকজনকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সংগঠনের শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, স্বাচিপের বিক্ষোভের একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা শারফুদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ডা. রাসেল আহমেদকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যের কক্ষ থেকে বের করে দেন। একইসময়ে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজডের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. রসুল আমিনকেও মারধর করে বের করে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের চিকিৎসকদের অভিযোগ, আগের নিয়োগগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিদায়ের মুহূর্তে আরও শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অ্যাডহকের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ বাণিজ্যের এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার থেকে স্বাচিপের নেতারা বিক্ষোভ করছেন।
হামলার বিষয়ে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী ডা. রাসেল আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং হামলায় আহত হওয়ার কারণে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিসি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, স্বাচিপের নেতাকর্মীরা অনেকটা আক্রমণাত্মক ভাবেই ভিসি অফিসে আসেন। এক পর্যায়ে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার সদস্য সচিব অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো বলেন, বিএসএমএমইউতে নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে ভিসি দায়িত্ব পালন করছেন তার দায়িত্ব রুটিন কাজ করা। কিন্তু তিনি শতাধিক ডাক্তার, কর্মচারী ও প্রায় ৩০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সবাই মনে করছে এই নিয়োগের পেছনে অর্থের লেনদেন আছে।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি ভিসি বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়াদের স্থায়ীকরণ করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা কোনোক্রমেই সিন্ডিকেট বসতে দেব না, যার কারণে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ করছি। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে একই বিষয়ে উপাচার্য ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, যেহেতু এটা নিয়ে একটি পক্ষ আন্দোলন করছে এবং আমার সব কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে, তাই আমিও সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, বিএসএমএমইউয়ে এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার এবং শনিবারও দুই দফায় হাতা-হাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হন। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে গত তিন বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় দুই হাজার এডহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া এসব ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ করতে আবার নিয়ম ভাঙছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, এমনটাই দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের একাংশ।
এনএইচ