tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৫ পিএম

গাজা যেন এক উন্মুক্ত কারাগার


palala-202

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্র অঞ্চল গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।


তারপর থেকেই গত কয়েকদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছেই। তবে এবারই প্রথম নয়। এই উপত্যকায় সশস্ত্র সংঘাতের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সংঘাতের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।

গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকেই শাসন করে আসছে হামাস। কিন্তু গত শনিবার (৭ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাদের হামলা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। হামাস ইসরায়েলে একসঙ্গে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে অনেক হামাস যোদ্ধা গাজার সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে।

এরপর তারা ইসরায়েলি বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলাকে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের পরিচালিত এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়, ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত আন্তঃসীমান্ত অভিযান বলে মনে করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থা এবং ফিলিস্তিনিরা গাজাকে এখন বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন, এক মার্কিন প্রতিনিধিকে বলেছিলেন: "আমি চাই গাজা সমুদ্রে ডুবে যাক, কিন্তু তা হবে না, তাই আমাদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।"

আইজ্যাক রবিন ১৯৯৫ সালে এক ইহুদি চরমপন্থীর হামলায় নিহত হন। তবে তিনি যে সমাধানের কথা বলেছিলেন, তিরিশ বছরের বেশি সময় পরেও, সেই সমাধানের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।

গাজা উপত্যকা ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি অঞ্চল যা ইসরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে একটি। গাজা উপত্যকাকে ঘিরে চার হাজার বছরের অবরোধ এবং ভোগ দখলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

প্রাচীন মিশরীয় যুগ থেকে শুরু করে খ্রিস্টের কয়েকশ বছর আগে পর্যন্ত, এমনকি ১৬ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজবংশ, সাম্রাজ্য এবং ব্যক্তি এই গাজা উপত্যকাকে শাসন, ধ্বংস ও পুনরুদ্ধার করেছে। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, রোমান সাম্রাজ্য বা মুসলিম জেনারেল আমর ইবনে আল-আস এই গাজা উপত্যকা জয় করেছে।

যখন যারা গাজা জয় করেছে তখন তারা তাদের মতো করে এখানকার ধর্মীয় বিশ্বাস, সমৃদ্ধি ও পতনকে প্রভাবিত করেছে। গাজা ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, এরপর এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ব্রিটেন মূলত একটি ঐক্যবদ্ধ আরব রাজ্য গঠনের জন্য কাজ করছিল।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ এবং তুর্কিরা গাজা উপত্যকা এবং অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ এশিয়ান আরব অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যতের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। কিন্তু ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সময়, বিজয়ী ইউরোপীয় শক্তিগুলো প্রতিশ্রুত ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়। বরং তারা বেশ কয়েকটি ম্যান্ডেট জারি করে যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে বিভক্ত করে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়।

এভাবে গাজা ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত লীগ অফ নেশনস এর অনুমোদন দেয়। গাজা উপত্যকা ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অংশ থাকে।

এমবি