tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ১৮:৪৭ পিএম

নির্বাচন বন্ধ করা হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না : সিইসি


90

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ করা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

সিইসি বলেন, ‘আমরা টকশোতে শুনেছি- কেউ আনন্দিত হয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ প্রতিবাদ করেছেন, কেউ সমবেদনা জানিয়েছেন। আমাদের মনে হয়েছে, এতে করে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেই বিভ্রান্তি অপলোপনের জন্য কিছু ব্যাখ্যা আমাদের দেওয়া দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত সিইসি এককভাবে গ্রহণ করেননি, কমিশন গ্রহণ করেছে। সিইসি কোনও সিদ্ধান্ত এককভাবে গ্রহণ করেন না। করতেও পারেন না। কমিশন সদস্যরা বসে আলাপ-আলোচনা করে, চিন্তাভাবনা করে যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন- আমরা কী করে এখানে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম। কেউ বলছেন- ইসি অফিসে বসে এতগুলো ভোট কী করে দেখলো। অনেকে জানেন না, আমরা আধুনিক একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ তৈরি করেছি। সেখানে আধুনিকভাবে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে প্রতিটি কেন্দ্রে কীভাবে নির্বাচন হচ্ছে- তা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আছে। এখানে স্থানে (ঘটনাস্থলে) থাকার চেয়ে আরও বেশি নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ আছে। এই বিষয়টি হয়তো অনেকের জানা নেই।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল।’

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর ইভিএম ব্যবহার করে সবগুলো নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে দাবি করে সিইসি বলেন, ‘আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। সিসিটিভি স্থাপনের ফলে এই অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে গাইবান্ধা-৫ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।’

নির্বাচন বন্ধের কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে বসে ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই- ভোটকক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি, বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা পরে আছেন এবং মহিলা এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরা- যা আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এই সব এজেন্ট ছাড়াও আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। ভোটাদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদেরকে ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনও কার্যকরি পদক্ষেপ তাদেরকে গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তখন ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে প্রদান করা হয়।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘একে একে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতোমধ্যে রিটানিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন। আমি এবং বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেতো যে, ওই কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই কমিশন মনে করে যে, এই ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ভোট প্রদান/গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেলা আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।’

ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

কমিশন সংবিধান ও আইনের প্রতি অনুগত থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘কমিশনকে এভাবে আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচনকে বিধি মোতাবেক পরিচালনা করা সব নির্বাচন কর্মকর্তা, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন মাঠপর্যায়ে সীমিত ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি এককভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সার্বিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনও নির্বাচনকে পুরোপুরি ফলপ্রসূ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে।’

একটি নির্বাচন করতে গিয়ে এই পরিস্থিতি— বড় আকারে নির্বাচন হলে সেটা সামাল দেবেন কীভাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা হতাশ হবো না। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। এই নির্বাচন দিয়ে আগামী দিনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’

ক্ষমতাসীন দল প্রশ্ন তুলেছে ঢাকা থেকে কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন- জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কেন হয়েছে, কী কারণে হয়েছে, কিছুই আমরা বলতে পারবো না। আমরা যেটা স্বচক্ষে দেখেছি সেটাই ফ্যাক্ট। এর পেছনের কারণ, সেটার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। তদন্তের পরে এটা জানা যাবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৩ অক্টোবর) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ মোট ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুপুরের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া বাকিরা অনিয়মের অভিযোগ করে ভোট থেকে করে দাঁড়ান। পরে অনিয়মের অভিযোগে সংসদীয় আসনের পুরো ভোট বন্ধ করে দিয়ে আলোচনায় আসে নির্বাচন কমিশন। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করা নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে নানা বক্তব্য আসছে, কেনো এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এন