গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
Share on:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় রেললাইন কেটে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহিন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ৯টায় গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) মাকসুদের রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার কাউন্সিলর শাহিন আলম গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ট্রেনে নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তিতে ওই কাউন্সিলরের নাম আসায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
পুলিশ সুপার মাকসুদের রহমান জানান, গ্রেপ্তার কাউন্সিলর শাহিন আলম সিঙ্গাপুর যাওয়ার চেষ্টাকালে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে পিবিআইয়ের পুলিশ সদস্যরা তাকে নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার ৩৮ ঘণ্টা পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। ট্রেন নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ৭ আসামির মধ্যে ৫ জন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে কাউন্সিলর শাহীন আলমের নাম প্রকাশ পায়।
ট্রেন দুর্ঘটনার নাশকতা মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উত্তর ছায়াবিথী এলাকার মৃত সোলায়মান মোড়লের ছেলে শাহানুর আলম (৫০), নেত্রকোনার মদন উপজেলার বারইবাজার গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে জান্নাতুল ইসলাম (২০), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বান্দীয়া গ্রামের তাইজুদ্দীনের ছেলে মেহেদী হাসান (২৫), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মৃত বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে হাসান আজমল হোসেন ভূঁইয়া (৫০), গাজীপুর মহানগর সদর থানার ভানোয়া এলাকার তারিকুল ইসলাম দিপুর ছেলে জুলকার নাইন আশরাফি হৃদয় (৩৫), কানাইয়া পূর্বপাড়া এলাকার মৃত ওমেদ আলী মোল্লার ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩২) এবং মধ্য ছায়াবীথি এলাকার আফতাফ উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা (৩৮)। তাদের মধ্যে কাউন্সিলর হাসান আজমল হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন জামিনে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের রৌহা গ্রামের মোছলেম উদ্দিনের ছেলে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন (৩৫) নিহত হন এবং আহত হন আরও ১০ জন।
তার আগে, মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতের কোনও একসময় দুর্বৃত্তরা অক্সি-অ্যাসিটিলিন ব্যবহার করে গ্যাস কাটার দিয়ে রেললাইন কেটে রাখে। তদন্তে পাওয়া যায় দুর্বৃত্তরা নাশকতা করতে ওই রেলপথের চিলাই ব্রিজ এলাকায় ২০ ফুট অংশ কেটে রেখেছিল। ওই ঘটনার পর ২৭ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এনএইচ