‘আতঙ্কই সত্যি হলো, ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল’
Share on:
ঈদে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে গেছেন অনেকে। ঈদের আনন্দের মাঝে হঠাৎ করেই ডুবতে হয়েছে বন্যায়। এতে মাটি হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। তেমনি ঈদ করতে বাড়িতে এসে বন্যার কবলে পড়েছেন সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম।
তিনি বলেন, বন্যার আতঙ্কে ছিলাম। অবশেষে সেটাই সত্যি হলো। ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল। পরিবার নিয়ে আনন্দের সময়ে বন্যা আসল।
টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তঘেঁষা জেলা সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবেশ করছে মূল শহরে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীননগর, নতুনপাড়া, হাছননগর, শহীদ আবুল হোসেন রোড, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর, সবজি বাজার, শান্তিবাগ, বাঁধনপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে হাঁটু সমান পানি দেখা যায়। শহরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় সুনামগঞ্জের পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ও ছাতক পয়েন্টে ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শহরের নবীনগরের দোকানি তায়েফ রহমান বলেন, ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে দোকানে আসছি। নদীর পানিতে সড়ক ডুবে দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। তাই ছোট ভাইকে নিয়ে দোকানের নিচের অংশের মালামাল বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা মোহাম্মদ ফয়েজ মির্জা বলেন, অফিস থেকে এবার মাত্র তিনদিনের ছুটি পেয়েছি। আজ দুই নম্বর দিন। চেয়েছিলাম আজকেও থাকব। কিন্তু শহরে যেভাবে পানি বাড়ছে, এখনই যদি সুনামগঞ্জ ত্যাগ না করি তাহলে বন্যার পানিতে আটকা পড়তে পারি।
শহর ছাড়াও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট। এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা সড়ক ডুবে জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও সুনামগঞ্জের ভারি বর্ষণের ফলে জেলার প্রায় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত কম হলে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুনামগঞ্জ জেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও জগন্নাথপুরে ৫ টন করে জিআর চাল দেওয়া হয়েছে। ৬০০ টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। এছাড়াও এ পর্যন্ত নগদ ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে।
এনএইচ