জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের আত্মপ্রকাশ
Share on:
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার শীর্ষক সেমিনারের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ‘জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ (এনসিপিটি)’।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
গত ১৫ বছরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বেছে বেছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ, দল-নিরপেক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের কোনোটাই উপস্থিত নেই।
জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাছুমের সভাপতিত্বে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ উল আলম সওদাগরের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের বিধান তো এখনো বাতিল হয়নি। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করেন। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় কিনা। যদি চায় তবে সেটাই দিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতের প্রেক্ষিতে সাধারণ নাগরিকদের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। আমরা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে বর্তমান সংকটের নিয়মতান্ত্রিক সমাধানের প্রয়াস চাই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবল আন্দোলনের সুফল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আবার কুফল হচ্ছে তাদের দ্বারা বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই বর্তমান সংকট। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রদান করেছে। সুতরাং ব্যবস্থাটি উভয় দলীয় প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন। তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে সৃষ্ট জাতীয় ঐকমত্য এখনো অটুট ও অনিবার্য।’
সংগঠনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’ আমাদের বর্তমান উদ্যোগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেছেন, শুধুমাত্র তারাই শামিল নন বরং যারা রাষ্ট্র সম্পর্কে চিন্তা করেন, রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন ও পরামর্শ দিতে চান, এমন সব লোকদের শামিল করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনে রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করেন, অংশগ্রহণ করতে চান, এমন সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সলিম উল্লাহ খান ও সাবেক সচিব মোতাহার হোসেন।
এছাড়াও উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন- দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি-এর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মিজানুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল প্রমুখ।
এনএইচ