বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে রায়ের প্রতিবাদে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যেগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় জানেন, জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলায় ন্যায়ভ্রষ্ট আদেশ ও ফরমায়েশি একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদ এবং ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকার গঠন, আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দি ও ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধীদলসমূহ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। অথচ সরকার যেনতেনভাবে আরেকটি পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিবে না।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক ফরমায়েশি রায় দেয়া হচ্ছে। গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সংগ্রামী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে নূন্যতম আইনের সুযোগ না দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়ে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আইনজীবীগণ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, এই মামলা ট্রায়ালের জন্য যে আইনী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া দরকার, সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। আদালতে অভিযুক্ত আসামীগণের যে প্রতিকার পাওয়া দরকার ছিল, সেই প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
দক্ষিণের আমীর বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকায় জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেন্ড নিক্ষেপসহ ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে। সেইদিন ঢাকাসহ সারাদেশে হামলা চালিয়ে বিরোধীদলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আজ দেশে নাগরিকদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। কথা বলার অধিকার নাই, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নাই, ন্যায়বিচার ও সুশাসন বলতে কিছুই নেই। চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে সরকার নানামুখি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষপ নিয়েছে। হঠাৎ করেই জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলাগুলোতে আইনের নূন্যতম তোয়াক্কা না করে দ্রুততার সাথে শেষ করে ৬৭ টি মামলায় রায় দিয়ে প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের সাজা দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার পক্ষ নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছে না।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে বিশেষ তৎপর দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মামলাগুলোতে একসাথে অনেক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যান্য স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই অনেক মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দী নেয়া হচ্ছে। অফিস সময় পেরিয়ে গভীর রাত অবদী সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। উম্মুক্ত আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড না করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তা টাইপ করে আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সাক্ষীদের টেলিফোনে আদালতে ডেকে আনা হচ্ছে। পছন্দ না হলে সেই সাক্ষীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কারাগারে থাকা আসামীদের কারা কর্তৃপক্ষ হাজির না করলেও আসামীদের কারাগার থেকে বিশেষ গাড়ীতে আনা হচ্ছে। এ সময় পর্যন্ত আসামী ও স্বাক্ষীদের বসিয়ে রাখা হচ্ছে। জেরা করার জন্যও সময় দেয়া হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে সময় বেধে দেয়া হচ্ছে। কখনো কখনো আসামীদের কারাগারে রেখে অনলাইনে স্বাক্ষ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি মামলায় ২০, ৫০, ১০০ জন বা ততোধিক স্বাক্ষীর নাম থাকলেও সকল স্বাক্ষীদের প্রতি নন বেলএ্যাবল ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। ফলে দেখা যায় একদিনই ১০-১৫ জন স্বাক্ষী হাজির হচ্ছে। অপর দিকে অন্য কোন স্বাক্ষী না এসে তদন্তকারী কর্মকর্তাও হাজির হচ্ছে। কোন কোন মামলায় অনেক স্বাক্ষীর নাম থাকলেও শুধুমাত্র বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষী নিয়ে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত করা হচ্ছে। কোন কোন মামলায় ইতিপূর্বে যে সকল স্বাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে কোন পক্ষের রিকলের আবেদন ছাড়াই স্বাক্ষীকে এনে বিশেষ ব্যবস্থায় পুন:স্বাক্ষী নেয়া হচ্ছে। অথচ কোন জরুরী আইনগত বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবিগণ দরখাস্ত দিলে আদেশ না দিয়ে নথিভুক্ত রাখা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দরখাস্ত খুজেঁও পাওয়া যায় না বলে আইনজীবীগণের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার মূলত: আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করা এবং রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। সরকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সুকৌশলে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা ও নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য এই ধরনের ফরমায়েশি রায়ের আশ্রয় নিয়েছে। সরকার এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে চায় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করতে চায়। ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। সরকার পতনের আন্দোলনে আজ সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ। দেশের জনগণ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই স্বৈরাচারি, জালিম সরকারের পতন নিশ্চিত করে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।
দক্ষিণের আমীর বলেন, জনগণ এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা অবিলম্বে এ ধরণের ন্যায়ভ্রষ্ট সাজা বাতিল করে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় গণআন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করার মাধ্যমেই জনগণ তাদের আইনানুগ ন্যায্য অধিকার আদায় নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, শামছুর রহমান, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, কামরুল আহসান, আব্দুর রহমান প্রমুখ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি