tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৩:২০ পিএম

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা


sri-lanka-20240726132036

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে বলে নোটিশ দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।


বৃহস্পতিবার দেওয়া সেই নোটিশে আরও বলা হয়েছে, আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচনে যে প্রার্থী হবেন, তা প্রায় নিশ্চিত। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২ জনের নাম শোনা যাচ্ছে— সজিত প্রেমাদাসা এবং অনুরা কুমারা দেশনায়েক।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অধিকাংশই অবশ্য মনে করছেন, জয়ের সম্ভাবনা অন্য দুই প্রার্থীর চেয়ে রনিল বিক্রমাসিংহের বেশি।

৭৫ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হন ২০২২ সালের ২২ জুলাই। তার আগে এক সপ্তাহ ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন তিনি। তারও আগে ওই বছরের ১১ মে রনিলকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হন গোতাবায়া রাজাপাকশে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশে।

গোতাবায়া-মাহিন্দা সরকার গঠনের তার বছর শুরু হয় করোনা মহামারি। সেই মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিতে চরম ব্যর্থতা, সরকারি তহবিল থেকে বেহিসেবি অর্থব্যয় এবং সরকারের ভুল নেতৃত্বের ফলে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকে যায়। এতে ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ আমদানির মতো অর্থও ছিলো না দেশটির।

এক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের চরম বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। তিনি দেশত্যাগের পর পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতাদের ভোটে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল এবং গোতাবায়া সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদের বাকি ২ বছর পূর্ণ করেন।

এই দুই বছর ছিল শ্রীলঙ্কার সংকটে জর্জরিত মৃতপ্রায় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার পথে যাত্রার বছর। রনিলের আমলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি জরুরি ঋণ পায় শ্রীলঙ্কার সরকার। এছাড়া ভারত, চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন মিত্র দেশও ঋণ ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে।

২০২৩ সালে ২ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। তার আগের বছর ২০২২ সালে সংকোচনের হার ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমানে অবশ্য সেই পর্যায় পার করেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির অর্থনীতিবিদদের ধারণা, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে অর্থনীতির। তবে তারপরও দেশটির বকেয়া বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ থাকবে অন্তত ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার।

এছাড়া দেশটির অর্থনীতি খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও জনগণের দুর্ভোগ তেমন লাঘব হয়নি। এখনও মূল্যস্ফীতি, বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলো শ্রীলঙ্কায় বেশ ভালোভাবেই রয়েছে।

রাজধানী কলম্বোভিত্তিক থিংকট্যাংক সংস্থা পলিসি অল্টারনেটিভসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ভবানী ফনসেকা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার জন্য এটি জটিল একটি সময়। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য নির্বাচন অপরিহার্য, কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সংকট যেহেতু এখনও পুরোপুরি কাটেনি—তাই এবারের নির্বাচন বিগত নির্বাচনগুলোর মতো হবে বলে মনে হয় না। তবে জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।”

সূত্র : রয়টার্স

এনএইচ