নিউমার্কেটে সংঘর্ষে জড়িত অস্ত্রধারীরা শনাক্ত, ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য
Share on:
নিউমার্কেটে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় সংগ্রহ করা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কুরিয়ার কর্মী নাহিদ মিয়াকে কুপিয়ে হত্যাকারীদের দুজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় তারা সরাসরি জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে তাদের মধ্যে একজন হলেন কাইয়ুম, অন্যজনের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে তারা দুজনই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতার অনুসারী। থাকেন কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসে।
ডিবি সূত্র বলছে, ধারালো অস্ত্র নিয়ে যারা মঙ্গলবার ভাঙচুর ও সংঘর্ষে অংশ নিয়েছেন, তারা মূলত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সামাদ আজাদ ওরফে জুলফিকার, সদস্য শফিক আহমেদ, জসীম উদ্দিন ও শাহীন সাদেক মীর্জার অনুসারী। তাঁরা সবাই সেদিন সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে ডিবি জানিয়েছে। এর মধ্যে শাহীনকে ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, নাহিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেলমেটধারী এবং হেলমেট ছাড়া একাধিক ব্যক্তি কুপিয়েছেন। এর মধ্যে একজনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যার ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তার পরিচয় সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দুজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে, যাদের একজন সেই অস্ত্রধারী হতে পারেন। তারাও ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদেরকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ও হেলমেট পরে ঢাকা কলেজের যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির চার নেতার অনুসারীরা বেশি সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে নাহিদ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জসীম উদ্দিন ও নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ফিরোজ হোসেনের অনুসারী।
গত মঙ্গলবার সংঘর্ষে এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানের ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে অস্ত্রধারীরা। ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এই গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ নেতা জুলফিকার, ফিরোজ ও জসিম।
তবে জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তাদের তিনি চেনেন না। ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।
হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া কাইয়ুম সম্পর্কে তিনি জানান, কাইয়ুমকে কলেজের ছাত্রাবাসে দেখেছেন। অন্য গ্রুপের রাজনীতি করেন কাইয়ুম। তবে ছাত্রলীগের কোন নেতার অনুসারী কাইয়ুম, সেটা তিনি নিশ্চিত নন।
অন্যদিকে, সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেননি সামাদ আজাদ। তবে তার দাবি, সেদিন ছাত্রদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
সংঘর্ষের বিষয়ে কলেজের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ফিরোজ হোসেনের দাবি, তিনি সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডা থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত। এর জের ধরে মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকানমালিক-কর্মচারী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুজন। আহত হয়েছেন অর্ধশত।
এইচএন