অস্থিরতা কাটছে না পোশাক খাতে
Share on:
ক্ষমতার পালাবদলের পর তৈরি পোশাক শিল্পে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা শত চেষ্টায়ও দূর করা যাচ্ছে না।
নানা পক্ষের দেন-দরবারের পর এই খাতে অস্থিরতা কিছুটা কমলেও তা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পোশাক শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোসহ ১৮ দফা দাবি পেশ করে নতুন আন্দোলন শুরু করেছে। অপর দিকে বর্তমান পরিস্থিতি মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন মালিকরা। এতে পোশাক খাতে অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পোশাক কারখানা।
মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে মজুরি পুনর্নির্ধারণ ও বাৎসরিক ন্যূনতম ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের (বেতন বৃদ্ধি) দাবিসহ ১৮ দফা দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এই দাবিতে বেশ কিছু পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক কারখানা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে পোশাক মালিকরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রাজধানীর উত্তরা অফিসে এক জরুরি সাধারণ সভা সভা শেষে বিজিএমইএ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পের অক্ষমতা এবং উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কারণে এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানো সম্ভব হবে না।
শ্রমিক আন্দোলনে দিনভর উত্তাল থাকার পর সোমবার গাজীপুরে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, সোমবার শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১২টি পোশাক কারখানা ও একটি খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা। এর মধ্যে খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ায় মোট ৫২টি পোশাক কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। চলমান শ্রমিক অসন্তোষ ও নিরাপত্তার স্বার্থে ৪৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর নয়টি কারখানায় সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় আজও বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন নরসিংহপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে।
- পোশাক শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি
এর আগে দুপুরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে
২. যে সব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে
৪. কোনো শ্রমিকের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে/চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান করতে হবে, এর সাথে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্য ধারাসমূহ সংশোধন করতে হবে
৫. সব প্রকার বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে
৬. হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে
৭. সব কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড ব্যবস্থা চালু করতে হবে
৮. বেতনের বিপরীতে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে
৯. শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে
১০. বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না; বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
১১. সব প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে
১২. ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করতে হবে
১৩. কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ প্রদান করতে হবে
১৪. জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে
১৫. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশনস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে
১৭. অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে ও
১৮. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করতে হবে।
এনএইচ