tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২২, ১১:০১ এএম

ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ দুপুরে


70

আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপির বড় জমায়েতের চ্যালেঞ্জ। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় কার্যত বিচ্ছিন্ন ফরিদপুর।


তবুও দলটি সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাস ধর্মঘট ডাকায় দুদিন আগ থেকেই নেতাকর্মীরা শহরে চলে আসেন। নৌকার ঘাঁটিতে ব্যাপক শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে চায় দলটি।

শনিবার (১২ নভেম্বর) শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ।

এদিকে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা কুশলবিনিময় করেন।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে ফরিদপুর শহরে কোনো বাস প্রবেশ করেনি এমনকি কোনো বাস ছেড়েও যায়নি। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

নসিমন-করিমন আর ব্যাটারিচালিত রিকশায় তারা গন্তব্যে যান। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছুটা রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। কয়েক দিন ধরে শহরে শোডাউন করছে ক্ষমতাসীনরা।

শুক্রবার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

পুলিশ শহরের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন লোকদের তল্লাশি চালায়। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সমাবেশের মাঠে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। সব প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হবে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে ফরিদপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের দুর্গ মনে করা হলেও সরকারের নানা ব্যর্থতায় সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এ এলাকা এখন বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে। আজকের সমাবেশে সেটার প্রমাণ মিলবে।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ হয়। এসব সমাবেশেও ধর্মঘট ডেকে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের সমাবেশেও একই চিত্র দেখা গেছে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে নেতাকর্মীরা কয়েকবার যান পরিবর্তন করে সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।

ফরিদপুর বিভাগের ৫ জেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা ৩ দিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বেশিরভাগ নেতাকর্মী সমাবেশের মাঠেই রাতযাপন করেন।

কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের সঙ্গে থাকেন। মাঠের পাশেই চলে রান্না। অনেক নেতাকর্মী তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষক দলের নেতাকর্মীদের চায়না প্রজেক্টে থাকা ও খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এ প্রসঙ্গে বলেন, ফরিদপুরে থাকার ভালো হোটেল নেই। তাছাড়া এত নেতাকর্মীর থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় শামিয়ানা টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করে গণসমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর শহরের ভাঙা রাস্তা মোড় থেকে শুরু করে নতুন বাসস্ট্যান্ড হয়ে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কে চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যানবাহন।

ফরিদপুর পৌর বাস টার্মিনালে পার্ক করে রাখা হয়েছে ফরিদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো। বাসের চালক ও শ্রমিকেরা ক্যারাম খেলে বা গল্প করে তাদের সময় পার করছেন।

শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংযোগ মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে।

এছাড়া আরেকটি চেকপোস্ট বসিয়েছে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে আসার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদরের বাহির দিয়া সেতু এলাকায় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা জানান, চেকপোস্ট দিয়ে আসা প্রতিটি মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক এবং গাড়ি তল্লাশি করছে পুলিশ।

রাজবাড়ির পাংশা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা বাদশা মণ্ডল জানান, বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে তারা সমাবেশে এসেছেন। আসার পথে বাহির দিয়া ব্রিজ এলাকায় পুলিশ তাদের মাহেন্দ্রটি থামায়। পরে চেক করে ছেড়ে দিয়েছে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা থেকে সমাবেশস্থলে এসেছেন উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া। তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাতেই আমরা চলে এসেছি। মাঠেই রাতযাপন করছি। খাওয়া-দাওয়া হয় মাঠেই।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মো. মতিয়ার নামের পঞ্চাশ বছর বয়সি এক নেতা লাঠি ভর করে কিছুটা পথ হেঁটে ও মাহেন্দ্রে করে সমাবেশস্থলে এসেছেন।

মাঠে ঘুম, মাঠে রান্না : সমাবেশের দুদিন আগেই মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গণসমাবেশের মাঠে হাজির হতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

শুক্রবার রাতে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সমাবেশস্থলের অধিকাংশ ভরে গেছে। আগের রাতে সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাত্রিযাপন করেছেন। মাঠের পাশে ১০টি চুলায় খিচুড়ি রান্না করা হচ্ছে।

চট ও পাটি বিছিয়ে নেতাকর্মীরা মাঠেই রাতযাপন করেন। কিছু নেতাকর্মী থাকেন বিদ্যালয়ের বারান্দাতে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা মাঠের ভেতরেই নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন।

শুক্রবার রাতে সমাবেশ মাঠে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সমাবেশের সহ-সমন্বয়ক মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কতটা ত্যাগ শিকার করছেন তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।

দূর-দূরান্ত থেকে নানা ভোগান্তি পেরিয়ে তারা সমাবেশে আসছেন। খেয়ে না খেয়ে মাঠেই অবস্থান করছেন। নেতাকর্মীদের এমন ত্যাগ এবার বিফলে যাবে না।

এন