খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান সম্পন্ন
Share on:
জরুরি অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়।
পরে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। বিকেলে তাঁর সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসোনোগ্রাম ও ইসিজিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে।
পরীক্ষার রিপোর্ট রাতেই আসার কথা বলে জানান খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি সন্ধ্যায় জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের প্যারামিটার আবারও বাড়ছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঘন ঘন নেওয়া হচ্ছে সিসিইউতে। আবার কাজ শেষে কেবিনে আনা হচ্ছে। এখন লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনো চিকিৎসা নেই। আর তা দেশে সম্ভব নয়।
এই চিকিৎসক বলেন, ‘সিসিইউতে লিভার থেকে পানি বের করা হয়েছে। লিভার সিরোসিসের কারণেই খালেদা জিয়ার পেটে পানি জমে যাচ্ছে। পরে তা বের করা হচ্ছে। শরীরে জ্বরও আছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা রয়েছে। স্যুপ ও তরল জাতীয় খাবার ছাড়া তিনি তেমন কিছু খেতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছানায় সারাক্ষণ থাকতে হচ্ছে ইনজেকশন ও স্যালাইনের ওপর। মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে গত রোববার রাতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বেগম খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত সোমবার বেলা ১১টায় তাঁকে সিসিইউ থেকে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ, লিভার জটিলতায় ভুগছেন। গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাঁকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘সংকটজনক’ জানিয়ে দ্রুত তাঁকে আবারও বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে এই দাবি জানান তিনি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণ সমস্যা, তখন তাকে আটকে রাখা হয়েছে। বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই বেগম খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাঁকে যদি বিদেশে পাঠানো না হয় চিকিৎসার জন্য, তাহলে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।’
‘কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নজির আছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং চিকিৎসার জন্য যদি প্রয়োজন হয় তাঁকে বিদেশেও পাঠাতে হবে। বার বার তাঁর পরিবার থেকে, তাঁর ডাক্তাররা এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলেছি যে, মানবিক কারণে তাঁকে চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হোক। এ রকম অনেক নজির আছে। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাহেবকে পাঠানো হয়েছিল। জিয়াউর রহমান তাঁকে কারাগার থেকে জার্মানি পাঠিয়েছিলেন। আজকে যিনি জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন, সেই শেখ হাসিনাকেও কেয়ারটেকার সরকারের সময়ে চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল। আমরা সেই কথা ভুলে যাইনি।’
রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
বিএনপি চেয়ারপারসনের আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা নয়াপল্টন জামে মসজিদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এই দোয়া মাহফিল হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবদুল আউয়াল, যুবদলনেতা জাকির হোসেন প্রমুখ। এদিকে গাজীপুরেও জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজনে পৃথক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।