tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৭:৫৫ পিএম

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে তীব্র যানজটে ঢাকা অচল


image-281588-1720351783 (1)

রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে রোববার ছিলো তীব্র যানজট। এদিন একে তো সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কোটা বাতিলের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এতে আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।


রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এরপর তারা সায়েন্স ল্যাব মোড় দখল করে অবস্থান নেয়। পরে একে একে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে যেতে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতিরঝিল মোড়, সাতরাস্তা, মহাখালী, আগারগাঁও, আসাদ গেট, পান্থপথ, কলাবাগান, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর সড়কে আন্দোলনকারী আস্তে আস্তে এসে ঝড়ো হচ্ছেন। এ জন্য সড়কে থাকা গাড়িগুলো আগে যেতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতেই তৈরি হয়ে জ্যাম।

এ সময় তারা সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ব্লকেড ব্লকেড বাংলা ব্লকেড’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস শ্যাডো, হল পাড়া, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে অবরোধ করবেন।

এদিকে যানজট নিরসন ও সড়কে থাকা বিভিন্ন গাড়ি ভিন্ন রাস্তায় সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ট্রাফিক পুলিশ।

কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারায় দাঁড়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুর রহমান বলেন, কারওয়ান বাজারের এখনও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আসেনি। এরই মধ্যে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পান্থপথ থেকে অতিরিক্ত যানবাহন এদিকে আসছে। সেসব গাড়িকে পাস করে দিচ্ছি। তবে কারওয়ান বাজারে বাংলা ব্লকেড দিলে রাস্তায় থাকা গাড়িগুলোকে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়া নির্দেশনা রয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু উবায়দা বলেন, আমরা বাংলা ব্লকেডের অংশ হিসেবে আজ শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করেছি। তাছাড়া সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা চানখারপুল অবরোধ করেছেন। ঢাকা কলেজ এবং ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট-সায়েন্সল্যাব রোড অবরোধ করেছেন। আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এই অবরোধ চালিয়ে যাব।

সড়কে থাকা পথচারী ও গাড়ির চালকরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তবে সড়ক অবরোধ করার নগরবাসীকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দুর্ভোগে পড়া এসব মানুষ।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

এমএইচ