tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৬ এএম

বিএনপি নেতাদের আদালতে যাওয়া-আসার মধ্যেই মাস পার হয়


বিএনপি১
বিএনপি নেতাদের আদালতে যাওয়া-আসার মধ্যেই মাস পার হয়

এক মামলায় হাজিরা। আরেক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রায় দিনই যেতে হয় আদালতে। ৫ বছর ধরে একইভাবে চলছে। আদালত থেকে বাসা। বাসা থেকে আদালত। যাওয়া-আসার মধ্যেই মাস পার হয়। চাকরি, ব্যবসা সব গেছে। এখন আয়-রোজগার নেই। সকালে আদালতে এসেছি।


সাড়ে ১০টায় মিরপুর মডেল থানার মামলায় আদালতে দাঁড়িয়েছি। দুপুরে শাহ আলী থানার আরেকটি মামলার শুনানি আছে। বিকালে ঢাকা জজ কোর্টে ক্যান্টনমেন্ট থানার আরেক মামলার হাজিরা দিতে হবে।

এভাবেই দিন পার হয়ে যায়। এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। মাসে যতদিন আদালত খোলা থাকে প্রতিদিনই আসতে হয়। কোনো দিনই বাদ যায় না। এখানে এসে পুরো দিনই কোর্টে পার হয়।

অন্য কাজ করার সময় পাই না। পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। রাতে বাসায় ফিরে ঘুমাতে পারি না। প্রায়ই পুলিশ এসে খোঁজে। নতুন কোনো মামলা নাই। তবুও পুলিশি হয়রানি বন্ধ হয়নি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকতে হয়। 

এভাবেই নিজের মামলা জীবনের গল্প বলছিলেন ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম তুহিন। বলেন, প্রায়ই পুলিশ বাসায় ঢুকে তল্লাশি করে।

২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৮টি মামলা খেয়েছি। অধিকাংশ মামলা চার্জগঠন ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। একই অবস্থা ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম অমিরের। ২৪টি মামলা নিয়ে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।

পুলিশের কাজে বাধা, নাশকতা, ছিনতাই, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরক বহনের অভিযোগে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে। ১৩টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। একদিন পর পর মামলার তারিখ পড়ে। প্রতিদিনই আদালতে যেতে হয়।

শুরুতেই তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়েছে। ৮টি মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। দ্রুতই সাক্ষী নেয়া শুরু হবে। ২টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। মাইনুল ইসলাম অমি বলেন, মামলার এজাহারের সঙ্গে ঘটনা ও স্থানের কোনো মিল নেই। যেসব স্থানে সংঘর্ষ ও মারামারি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওসব স্থানে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। মনগড়া ঘটনা দেখিয়ে মামলা হয়েছে।

কমিটির তালিকা ধরে মামলা দেয়া হয়েছে। কমিটিতে যারা আছেন সবাইকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এতে কে কোথায় আছেন, জীবিত নাকি মৃত সেটা যাচাই করা হয়নি। অমি বলেন, ৫ বছর বাসায় ঘুমাতে পারি না। এলাকায় ঠিকমতো থাকতে পারি না।

আদালতে ঘুরতে ঘুরতে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কোনো কোনো দিন একসঙ্গে ৫টি মামলার তারিখ থাকে। তখন কোনটা রেখে কোনটায় হাজিরা দিবো তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। কয়েকবার জেল খেটেছি।

তোফাজ্জল হোসেন বাবু। ক্যান্টনমেন্ট থানা ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা রয়েছে। মাসে ২২ দিন আদালতে আসতে হয়। পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। পুলিশের ভয়ে বন্ধুদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন। ব্যবসা, চাকরি সবকিছু হারিয়েছেন। ঠিকমতো এলাকায় থাকতে পারেন না। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ২ থেকে ৩ মামলার শুনানি থাকে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর নাসির জামসেদকে। যাত্রাবাড়ী থানার নাশকতা মামলায় ১৬ দিন ধরে কারাগারে আছেন জামসেদ। তার নামে ৫টি মামলা হয়েছে।

এক মামলায় জামিন পেলে জেলগেট থেকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আবার কারাগারে নেয়া হয় জামসেদকে। দুই সপ্তাহ ধরে এভাবেই চলছে। জামিন পেয়ে কারামুক্ত হতে পারছেন না।

জামসেদের বড় ভাই নিলয় হাসান বলেন, গ্রামের বাড়ি ভোলার মতলব থেকে ফেরার সময় জামসেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে একটি মামলা দিলেও পরে একের পর এক মামলা দেয়া হয়।

এক মামলা জামিন পাইলে আরেকটা নতুন মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হচ্ছে। জামিন নিতে ১০ দিন ধরে আদালতেই ঘুরছি। 

এন