হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসের
Share on:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, বিচারের মুখোমুখি করতে হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে।
এছাড়া হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব একটা সুখের সম্পর্ক তৈরি হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা, সে প্রশ্নেও কথা বলেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঢাকায় নিজের বাসভবনে দ্য হিন্দুর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. ইউনূস ভারতের সাথে সম্পর্ক এবং সংস্কারের পরিকল্পনার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি তার সরকার গঠনের ১০০ দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন এবং উগ্রপন্থার উত্থান ও হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে “প্রোপাগান্ডা” বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করছি, তবে আমি বলব না যে আমরা এখনই “এ” গ্রেড পেয়েছি। অন্য ইস্যুতে বলব— অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন “এ-প্লাস” কারণ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি পেয়েছিলাম। সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। দেশে উন্মত্ত ব্যাংকিং সিস্টেম ছিল। খারাপ ঋণ ছিল, ৬০ শতাংশ অশোধিত ঋণ। বহু ব্যাংক একে অপরের সাথে কীভাবে লেনদেন করতে হয়, গ্রাহকদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়— ইত্যাদি জানেই না। আমাদের প্রায় অকার্যকর একটি আর্থিক ব্যবস্থা ছিল। তাই সেখান থেকে, আমরা ব্যাংকিং সিস্টেমকে আবার কার্যকর করে এই পর্যায়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, যদিও অবস্থা এখনও নিখুঁত নয়, তবে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে, কিন্তু এখন গত ১০০ দিন ধরে মাসে মাসে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি এবং এটি আমাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করেছে। আমরা মুদ্রাস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি, আমরা প্রচুর পরিমাণে বৈশ্বিক সমর্থন পেয়েছি— আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাথে ব্যবসা করছে, আমাদের আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে যাতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করা যায় ইত্যাদি।
আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে অবসরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ অনেক সরকারপ্রধানের সাথে দেখা করেছিলাম এবং আরও অনেকের সাথে কথা হয়েছে যারা আমাদের আর্থিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের এমন কর্মকর্তারা আছেন যারা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে প্রস্তুত যাতে তারা বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকা না পড়েন, ওয়ান-স্টপ পরিষেবা আছে যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের কাজগুলো করতে পারেন। তাই আমি বলব— দেশ খুবই ইতিবাচক পথে এগুচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া এবং তিনি বাংলাদেশের সমালোচনা করে অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সাথে আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমার মনে হয় না ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে এবং সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তিনি (ট্রাম্প) সম্ভবত ভালোভাবে অবহিত নন। এটা একটা প্রোপাগান্ডা যা সারা বিশ্বে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বাস্তবতায় আসবেন, তখন ট্রাম্প অবাক হবেন যে— তাকে যে ধারণা দেওয়া হয়েছে তার থেকে বাংলাদেশ কতটা আলাদা। আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্রে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন মানে সবকিছু বদলে যাবে। প্রেসিডেন্টের পরিবর্তনের কারণে পররাষ্ট্রনীতি এবং দেশ অনুযায়ী সম্পর্ক সাধারণত পরিবর্তিত হয় না।
এছাড়াও ট্রাম্প ২.০-তে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তাহলে আমাদের মনে রাখবেন এখনকার বাংলাদেশ ২.০ আছে, যাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলি। সুতরাং আমরা অপেক্ষা করব এবং যদি মার্কিন প্রতিনিধিরা এসে আমাদের দেখে-পরীক্ষা করে এবং যদি দেখে আমাদের অর্থনীতি ভালো চলছে, তারা খুব আগ্রহী হবে। তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ক্রেতা, তাই আমাদের দিক থেকে এটি খুব ভালো সম্পর্ক যা আমরা বছরের পর বছর ধরে গড়ে তুলেছি। আমাদের আশা এটা আরও জোরদার হবে।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সরকারের বেশ কয়েকটি বিবৃতির বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আমার প্রথম ফোন কলে (১৬ আগস্ট), তিনি ঠিক এটাই বলেছিলেন— বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে ইত্যাদি। আমি তাকে খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, এটা প্রোপাগান্ডা। অনেক সাংবাদিক এখানে আসার পরে, কিছু উত্তেজনা সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন এসেছে, তবে মিডিয়াতে যেভাবে বলা হয়েছে পরিস্থিতি তেমন নয়। এই প্রচার-প্রোপাগান্ডা বাস্তবতার সাথে যায় না।
সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কমিশন করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মানবাধিকার কমিশন আছে এবং কেন সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদাভাবে করতে হবে? আমি (সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে) বলেছি, আপনারা দেশের নাগরিক। আপনাদের সমস্ত অধিকার সংবিধান দ্বারাই নিশ্চিত করা আছে। আমরা সকলেই চাই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক এবং সংবিধান আমাদেরকে যে সমস্ত অধিকার দিয়েছে সেগুলোও প্রতিষ্ঠিত হোক। আমাদের সংবিধান কমিশনে কে আছে এবং কে এর প্রধান (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিদ আলী রিয়াজ) আছেন সেটি আগে দেখুন এবং তারপর আপনি যা বলছেন তার সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করুন...অন্যথায় এটি পুরোটাই প্রোপাগান্ডা।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা না হওয়া নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ, এটি এখনও ঘটেনি। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়েছি, তখন মোদি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু মোদি সেখানে ছিলেন না, বিমসটেক (থাইল্যান্ডে) বাতিল করা হয়েছে এবং আমরা কেউই কমনওয়েলথ বৈঠকে যায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে— আমরা দেখা করব না।
আমরা শুধু প্রতিবেশী নই, ইতিহাস আমাদের একত্র করেছে। ভূগোল আমাদের একত্রিত করেছে। ভাষাগত সম্পর্ক আমাদের একত্রিত করেছে। সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করে। প্রথম দিন থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। অকার্যকর গোষ্ঠী হতে হবে কেন? এমনকি আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম যে, সার্ক নেতারা নিউইয়র্কে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও যেন বৈঠক করতে পারেন।
ভারত ও বাংলাদেশ এখন বিমসটেক, বিবিআইএন-এ সহযোগিতা করছে। তাহলে সার্ক কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্ক নয় কেন? আমরা যত বেশি বন্ধু এবং সম্পর্ক তৈরি করতে পারি, ততো ভাল। সার্ককে চলতেই হবে... এমন হওয়া উচিত নয় যে শুধুমাত্র দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) মধ্যে সম্পর্কের কারণে পুরো গোষ্ঠীটি অদৃশ্য হয়ে যায়। আমরা একটি রেজুলেশন পাস করতে পারি, ভারত-পাকিস্তানের যেকোনও ইস্যুকে এজেন্ডা থেকে স্থগিত করতে পারি, কিন্তু সার্ককে শেষ করতে পারি না।
সন্ত্রাসবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সার্ক এর কর্মকাণ্ড স্থগিত করতে ২০১৬ সালে ভারতকে সমর্থন করা কি বাংলাদেশের জন্য ভুল ছিল কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা যদি এমন শর্ত সামনে রাখি, তাহলে কোনো সম্পর্কই চলবে না। দুই সদস্য দেশের সম্পর্কের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশকে কেন ভুগতে হবে?
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ৫ আগস্টের ঘটনা কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কেন এটা (ভারতের জন্য ধাক্কা) হবে? বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারতেরও ওই দিনটি উদযাপন করা উচিত যে, বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে যেখানে মানুষ কষ্ট পেয়েছে, অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে গুম করা হয়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। ভারতের উচিত আমাদের তরুণদের যোগদান করা এবং একসাথে উদযাপন করা, যেমনটা অন্যান্য অনেক দেশ করে থাকে।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, হাসিনার ভারতে বসবাস করা, অন্তত আপাতত কোনো সমস্যা নয়। তবে তিনি বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বললে সমস্যা। তিনি বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলছেন এবং এটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটাই সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, হাসিনা এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় বের হয়ে তার কর্মীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে বলছেন এবং তার সেই অডিও রেকর্ডও প্রচার করা হচ্ছে, তাদেরকে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (ঢাল হিসেবে) ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা বলতে পারে— বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু করছে।
হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে সব আইনি উপায় অবলম্বন করব।
তবে প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী যদি ভারত হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান গ্রহণ না করলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন— ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করবে? হ্যাঁ, এই ধরনের ধারা আছে, কিন্তু হাসিনাকে রাখতে যদি ভারত সরকার সেগুলোকে ব্যবহার করে তাহলে আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে খুব একটা সুখের সম্পর্ক তৈরি হবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার খুবই স্বল্পস্থায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবকিছু আমরা মিমাংসা করতে পারব না। কিন্তু এটা (হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি) আমাদের পরে আসা কোনো সরকারও উপেক্ষা করবে না।
অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মসৃণভাবে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের স্বপ্ন হলো (চলাচল ও বাণিজ্যের স্বাধীনতাসহ) ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি সম্পর্ক কল্পনা করা। সেই দিকেই আমরা যেতে চাই। আপনি যা (জ্বালানি সংযোগ, বাণিজ্য সংযোগ) উল্লেখ করেছেন তা ভালো লক্ষণ এবং আমরা সেই দিকেই এগিয়ে যেতে চাই, তবে আমরা যা অর্জন করতে চাই তার থেকে এখনও অনেক দূরে আছি। আমরা একসাথে থাকার জন্য জন্মেছি। আমরা যমজ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, যখন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যে— আমরা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবো না, যে সরকার গঠন হবে, নির্বাচন আয়োজন করবে এবং নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। আমাদের বলা হয়েছিল, আমাদের প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশের সংস্কার। আমরা বেশি দিন থাকতে চাইনি, তাই আমরা এই ফর্মুলেশন নিয়ে এসেছি।
নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে, তবে পৃথক প্রক্রিয়া হিসাবে সংস্কারের অন্যান্য প্রক্রিয়াও সমান্তরালভাবে চলবে। এখন, প্রথমত, আমরা নির্বাচন কমিশন তৈরি করছি, যা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি ঘোষণা করব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করবেন। কিন্তু অন্য বেশ কিছু সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচন করতে পারবেন না— আমাদের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকবে কি না, বাংলাদেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে কিনা, মেয়াদের সীমা কী হবে থাকবে ইত্যাদি বিষয়ে সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি বলব— নির্বাচনের জন্য ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে, কিন্তু পথ চলতে চলতে কিছুটা থামতে হবে, কারণ এটি কোন দিকে যাবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেজন্য আমাদের সংস্কার কমিশনের কাছে যেতে হবে।
এই কাজে কয়েক বছর লাগতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার কোন ধারণা নেই। জনগণ একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়, তাই আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্য তৈরি করতে কাজ করব।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি, এবং বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বলেছে, সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তাই তারা ইতোমধ্যেই তাদের রায় দিয়েছে এবং আমরা দেশের একটি বড় দলের মতামতকে অস্বীকার করতে পারি না।
তাহলে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আপনার কোনো আপত্তি নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি রাজনীতিবিদ নই যে— একটি দল বা অন্য দল বেছে নেবে। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা পূরণ করছি। আমি নিজেকে কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখি না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসএম