দেশ ও জাতি বাচাতে এই সরকারের বিদায় ছাড়া বিকল্প নেই: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, দেশে গনতন্ত্র নেই। ভোটাধিকার নেই। খাবারের অধিকার নেই। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি। বিচারক আছে, বিচার নেই। সুবিচারতো অনেক দূরে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জামিন হয়। কিন্তু সরকার জেল গেট থেকে বারবার গ্রেফতার করছে।
আসলে দেশ ও জাতি বাচাতে এই সরকারের বিদায় ছাড়া কোন বিকল্প নেই। দফা এক-দাবী এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জনগন আজ ঐক্যবদ্ধ। সরকারের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
গত শনিবার দুপুরে স্থানীয় মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত পবিত্র আশুরার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান, ডাঃ আফনান প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, পবিত্র আশুরার সময় এক শ্রেনীর মানুষ শোক পালন করেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি কারবালার মতো ঘটনার পরই ইসলাম জীবিত হয়েছে। রাসূল (সা:) দ্বীনকে বিজয়ী করতে এসেছিলেন। তিনি ২৩ বছরের জীবনে প্রথম ১৩ বছর জনমত গঠন ও পরের ১০ বছরে ইসলামী সমাজ গঠন করেন। যারা রাসূল (সা:) কে অনুসরণ করেন, তাদের উচিত তিনি যে তরিকায় ইসলামকে বিজয়ী করেছেন, সেই তরিকায় কাজ করা। তিনি বলেন, ইমাম হোসাইন (রা:) জীবন দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামী খেলাফত কায়েম করার জন্য। তিনি আশুরার তিনটি শিক্ষা উল্লেখ করেন, পরামর্শের ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনা করা, অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পন করা ঈমানদারদের কাজ না এবং মজলুম মানুষের পাশে দাড়ানো ঈমানের দাবী।
ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, রাসুল (সা:) কুরআনের শাসন কায়েম করেছিলেন। যার মাধ্যমে অবহেলিত মানুষ মুক্তি পেয়েছিল। তার ইন্তিকালের পর খোলাফায়ে রাশেদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আজকে অনেকে ইসলাম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চান। যতদিন আলাদা থাকবে ততদিন সমাজে কোন শান্তি আসবে না। অশান্তির আগুন জ্বলবে। রাষ্ট্রকে ইসলাম থেকে আলাদা করা জাহেলিয়াত। তিনি হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, কেয়ামতের দিন যারা আরশের নিচে ছায়া পাবে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ন্যায় পরায়ন শাসক। আসলে ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ন্যায় বিচারের কোন স্থান নেই। যারা অন্যায় করে, তারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে অন্যায় করে যাচ্ছে।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, ইসলাম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কায়েম করা ফরজ। রাসূল (সা:)সহ সবাই এজন্য লড়াই করেছেন। তাই বিপদ আসলে ধৈর্য হারা হলে চলবে না। হতাশ হওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ইমাম হোসাইন (রা:) লড়াই করেছেন। কারন ইয়াজিদকে পরামর্শ ছাড়াই ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। বর্তমানে জুলুম তন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সবাইকে মিছিল, সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদেরকে দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকার দ্বিচারিতার ভূমিকা পালন করছে। এই জুলুম চিরদিন চলবে না। জনগন এর বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে। এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার দাবী এখন জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়েছে। এই সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব প্রথম জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। এই দাবীর পক্ষে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারও আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, সরকার পুলিশ প্রশাসনকে লাঠিয়ালে পরিণত করেছে। তবে সব পুলিশ খারাপ না। অতি উৎসাহীরা সতর্ক হোন। একটা বিষয় মনে রাখা উচিত, আপনাদের বেতন আওয়ামীলীগ দেয় না। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ আচরন আশা করি।
মাওলানা আব্দুল হালিম ইমাম হোসাইন (রা:) এর শাহাদাতের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি স্ব পরিবারে মাঠে নেমেছিলেন। এজন্যই তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। এখন রাসূল (সা:) এর আদর্শের উপর কায়েম থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে জেলে যেতে হয়, মাঠে গেলে গ্রেফতার হতে হয়। তিনি বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী, আবদুল কাদের মোল্লা। এখনও গুম আছেন ৫ জন। তিনি উল্লেখ করেন, যতই জুলুম নির্যাত হউক না কেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। জীবন দিয়ে হলেও দ্বীনকে বিজয়ী করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইমাম হোসাইন (রা:) খেলাফতের ধারা ব্যত্যয়ের কারনে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি জীবন দিয়েছেন, কিন্তু কোন আপোষ করেননি। তিনি যে চেতনাকে ধারণ করে জীবন দিয়েছিলেন, সেই চেতনাকে শানিত করতে হবে। ইসলামী সমাজ বিনির্মানে প্রাণপন চেষ্টা করতে হবে। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজথে লড়াই করে জনগনের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)