দুই সিটির ২০ হাজার কর্মীর শ্রমে পরিচ্ছন্ন হবে ঢাকা
Share on:
বছরজুড়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখলেও বড় কর্মযজ্ঞ থাকে কোরবানির ঈদকে ঘিরে। দুই ঢাকার ২০টি হাটের বর্জ্যের পাশাপাশি কোরবানির দিনে জবাই করা পশুর হাজার হাজার টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঘুম হারাম হয়ে যায় নগর কর্তৃপক্ষের।
এ বছর কোরবানির ঈদে দুই সিটি করপোরেশন ৪০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য সরানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর হাজারের উপর যান-যন্ত্রপাতি। এ জন্য কেনা হয়েছে নতুন নতুন যন্ত্রও।
দুই সিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এদিকে এত বড় কর্মযজ্ঞ শেষ করতে নিজেদের মতো সময় নির্ধারণ করেছে দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়েছেন ঈদে রাজধানীতে পশু কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হবে৷
অন্যদিকে পশু কোরবানির ছয় ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সোমবার (১৭জুন) সকালে ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানি শুরু করেছেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তিনদিন কোরবানি করা যাবে।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। তবে কোরবানিতে ঢাকায় কত পশুর চাহিদা সে তথ্য জানায়নি। তবে অতীতের তথ্য পর্যালোচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, ২৫ লাখ পশু দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে কোরবানি হতে পারে।
বর্জ্য পরিষ্কার নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের যত পরিকল্পনা
ঈদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেমন হবে তা নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, এ বছর ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে ডিএনসিসি সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ১০ হাজারের অধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত থাকবে। ডিএনসিসির সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা এবং আমি নিজে মাঠে থাকব। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করার জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ওয়ার্ডভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। হট লাইন নম্বর রয়েছে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারবে।
ডিএনসিসি বলছে, ঈদের দিন দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হবে। রাত ৮টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারণ করা হবে। পশুর হাটের বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য এবার আর ইজারাদারদের ওপর ভরসা করা হবে না। সিটি করপোরেশন থেকেই করা হবে।
পশুর রক্ত, বর্জ্য ও আবর্জনা অপসারণে ঈদের দিন ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়।
ডিএনসিসির মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি তদারকি করবেন।
ঈদের দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশুর মালিকদের পলিথিন সরবরাহ করবেন উত্তর সিটির কাউন্সিলররা। পরে বর্জ্যপূর্ণ ওই পলিথিন সংগ্রহ করবেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্জ্য প্যাকেট করতে ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ, এক লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ বিতরণ করা হবে। একই সময় দুই হাজার ৬৮০ বস্তা ব্লিচিং পাউডার (২৫ কেজির বস্তা), ৯০০ ক্যান স্যাভলন (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), সাত হাজার টুকরি ও এক হাজার ২৫০ লিটার ফিনাইল ব্যবহার হবে।
ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডে নেওয়া হবে। ল্যান্ডফিল্ডে বর্জ্য নেওয়ার জন্য ৮৫টি ডাম্প ট্রাক, ২১টি পে-লোডার, ১৮টি পানির গাড়ি, দুটি টায়ার ডোজার, পাঁচটি স্কিড লোডার, ১৪০টি পিকআপ ও ৪৫টি কনটেইনার ক্যারিয়ার ব্যবহার করা হবে।
এদিকে দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ৯ হাজার ৪৯৭ জন কর্মী কাজ করবেন। সব মিলিয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি যেসব জায়গায় পশু কোরবানি করা হবে, সেখানে ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার, ২২২ গ্যালন স্যাভলন ছিটানো হবে। এছাড়া বর্জ্যগুলো প্যাকেট করে রাখতে এক লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হবে।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, গত বছরের ন্যায় এবারও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সুতরাং ঈদের দিন যে বর্জ্য সৃষ্টি হবে, সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারিত হবে। পরের দিন যে বর্জ্য সৃষ্টি হবে সেটাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারিত হবে।
এদিকে ঈদের আগের রাতেই গরুর হাটগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
এনএইচ