tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ০৩ অগাস্ট ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম

গ্রেপ্তার ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই


121128_gret

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান সংঘাত, সহিংসতা অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুরের ঘটনায় সারা দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় শতাধিক মামলা করা হয়েছে।


এসব মামলায় প্রায় ১২ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ও মামলা নিয়ে আগের মতো তথ্য দিচ্ছে না পুলিশ। বেশ কিছুদিন পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা-গ্রেপ্তারের একটি

পরিসংখ্যান গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হতো। তবে আদালত, দেশব্যাপী মানবজমিনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সূত্রে খোঁজখবর নিয়ে ২রা আগস্ট পর্যন্ত মামলা গ্রেপ্তারের ওই পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানা এলাকায় চলমান পরিস্থিতিতে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ২৭৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৭ই জুলাই থেকে ২রা আগস্ট পর্যন্ত ১৬ দিনে প্রায় ৩ হাজার ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এরমধ্যে গত ২৩শে জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ৫১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই। তারা কোনো দলের রাজনীতি করেন না। বাকি যারা রয়েছেন, তারা বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল, যুবদল, গণঅধিকার পরিষদ ও জেপির নেতাকর্মী।

তবে ঢাকার বাইরে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশ একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এর বাইরেও যারা রয়েছেন তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র ও মানবজমিনের জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি জেলা ও থানা পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে।

পুলিশ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রিকশাচালক, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে গ্রেপ্তার করছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকের রিমান্ড আবেদন করছে। যাদের রিমান্ড মঞ্জুর হয় তাদেরকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য বের করার চেষ্টা করে। পুলিশের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে।

এর বাইরে পর্যায়ক্রমে দেশের ৫৬টি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মামলা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেক জেলা ও উপজেলায় পুরনো মামলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি), সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি), রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) এলাকায় মামলা দিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

অনেক সাধারণ নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাড়া জেলা পুলিশও মামলা ও আসামি গ্রেপ্তারে পিছিয়ে নেই। জেলা পুলিশের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ।

খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী নওগাঁ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ গত ১৭ই জুলাই থেকে ১লা আগস্ট পর্যন্ত যাদেরকে আদালতে হাজির করেছে তার একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। ডিএমপির প্রসিকিউশন শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলমান সহিংসতায় সর্বপ্রথম গত ১৭ই জুলাই ১৪ জনকে হাজির করে ডিএমপি।

পরে পর্যায়ক্রমে প্রতিদিনই আসামি হাজিরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরেরদিন ১৮ই জুলাই ৩৪ জন, ১৯শে জুলাই ৫৯ জন, ২০শে জুলাই ১৪১ জন, ২১শে জুলাই ২৩১ জন, ২২শে জুলাই ৩৮৫ জন, ২৩শে জুলাই ৫১৬ জন, ২৪শে জুলাই ৩৮৯ জন, ২৫শে জুলাই ২৬৪ জন, ২৬শে জুলাই ২৫১ জন, ২৭শে জুলাই ১৬৭ জন, ২৮শে জুলাই ১৭৯ জন, ২৯শে জুলাই ১২০ জন, ৩০শে জুলাই ১৪১ জন, ৩১শে জুলাই ৬৬ জন ও ১ লা আগস্ট ৫৪ জনকে হাজির করেছে।

তাদেরকে আবার কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ডিএমপি জানিয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ২৭৪টি মামলার মধ্যে ৫৩টি হত্যা মামলা হয়েছে। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ীতে ১৬টি, কদমতলীতে ৪, বাড্ডায় ৫, ভাটারায় ৩, পল্টন ও নিউমার্কেটে ৬টি, রামপুরায় ২, মোহাম্মদপুর ২, মিরপুর ২, কাফরুলে ২, খিলগাঁওয়ে ১, গুলশান ১, বনানী ১, ধানমণ্ডি ১, হাতিরঝিল ১, উত্তরা পশ্চিম ১ ও পূর্ব থানায় ১টি হত্যা মামলা হয়।

এরমধ্যে পুলিশ হত্যা মামলার সংখ্যা তিনটি। এর বাইরে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোতে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। ধারা দেয়া হয়েছে দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৮৪ ১৪৯ ৩০৭ ও ৩০২সহ আরও কিছু ধারা।

আতঙ্কে বাড়িছাড়া অনেকে: ২৮শে অক্টোবরে নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর ডিএমপি’র বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা হয়েছিল। আসামি করা হয়েছিল দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের। তারপর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছিল।

তখন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে মহানগর, থানা, ইউনিট ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই বাড়িছাড়া ছিলেন।

চলমান কোটা আন্দোলনে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ার পরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। গ্রেপ্তারের ভয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে তারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন না। তাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।

নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষার্থীরাও গা-ঢাকা দিয়েছেন। কারণ কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এমন অনেক শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেছে। এসব শিক্ষার্থীরা এখন কারাভোগ করছেন। এ নিয়ে সুশিল সমাজ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারাও বার বারই আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছেন।

ঢাকায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু,

ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ আসীম। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী।

এ ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসএম