দাবি পূরণের জন্য প্রয়োজন জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার : অধ্যাপক মুজিবুর
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে কোনো দাবি পূরণ করতে পারে না, দাবি পূরণের জন্য প্রয়োজন জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কর্তৃক কাঙ্খিত শিক্ষানীতি ও আমাদের করণীয় নির্ধারণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেখামাত্র গুলি করার নিদের্শ দেয়া কোনো নৈতিক শিক্ষা অর্জনকারী ব্যক্তি দিতে পারে না। খুনি শেখ হাসিনা দেখামাত্র গুলি করার নিদের্শ দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি নৈতিকতাহীন, বর্বর, অমানবিক, মনুষ্যত্বহীন এবং ক্ষমতালোভী মানুষরূপী পশু। চরিত্র শেষ হলে হারাবার কিছু আর থাকে না। খুনি সরকার চরিত্রহীন শেখ হাসিনা যাদেরকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারা সবাই ছিল অমানুষ। এরা গত ১৫ বছর মানুষকে কথা বলতে দেয়নি। অধিকার আদায়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি। খুন-গুম, হত্যা, হামলা-মামলা দিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন বিপ্লবী আর বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে। যার ফলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে তার দোসরা এখনো রয়ে গেছে। এদেরকে দমন না করলে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ধরে রাখা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কত দাবি উত্থাপিত হচ্ছে, কত দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আসছে। দাবি পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা সরকার নয়, দাবি পূরণের জন্য প্রয়োজন জনগণের নির্বাচিত সরকার। অতিতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ক্ষমতা আর ছাড়তে চায় না। আবার অতিতে কেউ কেউ ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে নতুন নতুন দল গঠন করে ক্ষমতা আকড়ে ধরার চেষ্টাও করেছে। তাই তিনি রাষ্ট্র সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেয়ার জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান।
শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী (দক্ষিণ) সভাপতি প্রফেসর নূর নবী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মনির হোসেন হেলালী, প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আলী আকবর গাজী, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি সিকদার আবদুল কুদ্দুছ, মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবদুল করিম শাহীন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবদুস সবুর মাতব্বর, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশারফ হোসেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু, ইসলামিক অ্যাডুকেশন সোসাইটির সেক্রেটারি ড. ইকবাল হোসেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সারোয়ার হোসেন, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আ ন ম রফিকুল ইসলাম মাদানী, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সেক্রেটারি এ বি এম ফজলুল করিম ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর কুরবান আলী প্রমুখ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, যিনি বললেন ২০২৪ সালে এসেও কেন মেয়েদের হিজাব পড়তে হবে তাকেই শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে শিল্পকরা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদকে অপসারণ করতে হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, রাষ্টের অঙ্গে-অঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরা একেবার একেক রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। এ সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এখনো সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসেনর অনেক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আওয়ামী স্বৈরচার পিতা এবং কন্যার ছবি রয়েছে। যতদ্রুত এ সকল দোসরদের অপসারণ করা হবে ততই রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল হবে। নয়তো জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত স্বাদ বাংলাদেশের জনসাধারণ ভোগ করতে পারবে না।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। বহু শিক্ষক ফ্যাসিবাদী হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বৃটিশ-ভারত থেকে প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। বৃটিশ-ভারতের প্রণীত এই শিক্ষা ব্যবস্থায় একঝাঁক কেরানি তৈরি হচ্ছে এবং হবে। তাই যতদ্রুত সম্ভব এই শেখ হাসিনার এই শিক্ষানীতি বাতিল করে ইসলামী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি। হাসিনার এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সকল স্তরের শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী (দক্ষিণ) সভাপতি প্রফেসর নূর নবী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা মানুষ গড়বে তাদেরকেও আদর্শিক ও নৈতিকতাপূর্ণ মানুষ হতে হবে। শিক্ষকতা কে পেশা হিসেবে না দেখে জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই শিক্ষানীতি কোথায় থেকে আসছে? শিক্ষক নামে অমানুষ, চরিত্রহীন, নৈতিকতাহীন আওয়ামী লীগের দালালেরা এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। এই শিক্ষানীতিতে মানুষ গঠন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে এজন্য আগে প্রয়োজন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষকদের ভূমিকা অন্যতম। তাই শিক্ষকদেরকে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেই শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশে ধর্ষণের সেঞ্চুরি হবে না। এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক তার ছাত্রীকে বাধ্য করবে না হিজাব খুলে ফেরতে। কেন আমাদের এই নৈতিকার অভাব? এর কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষার অভাব রয়েছে। নৈতিক শিক্ষার অভাব রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে আর ফিরে আসে না। বিদেশের মাটিতেই মেধা বিতরণ করে। কারণ দেশে মেধার মূলায়ন হয়নি। এ সময় তিনি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূলমন্ত্র ‘মেধা না কোটা, মেধা-মেধা’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত সাত পরিষদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পরিচালক, শিক্ষকবৃন্দসহ শিক্ষাবীদগণ বক্তব্য রাখেন। বক্তরা সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় করণের দাবিসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবনা পেশ
অদ্য ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশ এ মর্মে প্রস্তাব পেশ করছে যে-
১. ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার কর্তৃক যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদেরকে চাকরিতে পুণর্বহাল করতে হবে।
২. ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি ২০১০ বাতিল করে পূর্বের শিক্ষানীতি বহাল রাখতে হবে।
৩. শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল অফিস থেকে আওয়ামী লীগদের সরাতে হবে।
৪. আওয়ামী শাসনের দীর্ঘ ১৭ বছরে চলে আসা কু-শিক্ষার শিক্ষানীতি এবং তারই আলোকে প্রণীত সিলেবাস- কারিকুলাম বাতিল করে ২০২৫ সালের জন্য নতুন শিক্ষানীতি সিলেবাস-কারিকুলাম পাঠ্য বই প্রণয়ন করতে হবে।
৫. প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ রাখতে হবে।
৬. শিক্ষার সর্বস্তরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৭. জাতীয় শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার স্বকিয়তা রক্ষায় ও উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, অবকাঠামো তৈরি এবং শিক্ষা উপকরণসহ সকল ধরণের বরাদ্দ রাখতে হবে।
উপস্থিত সম্মানীত শিক্ষক ভাই ও বোনেরা, অদ্যকার এই প্রস্তাবনার সাথে এক মত পোষণ করে সবাই হাত উঠিয়ে হ্যাঁ বলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি