শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করা উচিত: জি এম কাদের
Share on:
বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য যারা ভারতকে দায়ী করছেন, তাদের ভাষ্যকে ‘ভুল বয়ান’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
বিদ্যমান ভারতবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য নয়াদিল্লিকে ভুলভাবে দায়ী করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা উচিত বলে জানিয়েছেন জি এম কাদের।
বাংলাদেশের সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জি এম কাদের। সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটাপদ্ধতির সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। একপর্যায়ে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান। পরদিন ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়।
জি এম কাদের জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণ করা উচিত। শেখ হাসিনার শাসনামলে তার ও তার সরকারের মাধ্যমে সংঘটিত সব অপরাধের জন্য বাংলাদেশের আদালতে বিচার হওয়া উচিত।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের জনগণ যখন সুসম্পর্ক চায়, তখন একটি দেশের সর্বোচ্চ প্রভুসুলভ আচরণ বন্ধ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর পরিবর্তে একে অপরকে সমান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি।
বাংলাদেশে ‘ভারত খেদাও’ প্রচারণার ব্যাপারে জি এম কাদের বলেন, এই বিদ্বেষ ভারতের বিরুদ্ধে নয়। বরং বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী শাসনের সূচনা ও অপশাসনের অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশটির একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) ও তার নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রতি ভারতের প্রশ্নাতীত সমর্থনের নীতির বিরুদ্ধে এই বিদ্বেষ।
৭৬ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করা ঠিক নয়। এটি একটি ভুল ভাষ্য। বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আপনি কীভাবে কাউকে দোষ দিতে পারেন? নিচু এলাকায় পানি প্রবাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যে সমস্যা মোকাবিলা করছি, সেটি হচ্ছে ভারত থেকে পানি কম ছাড়া। কিন্তু বর্ষাকালে যদি পানি না ছাড়া হয়, তাহলে সেখানে অবস্থিত বাঁধগুলো ভেঙে যেতে পারে। অনেক বড় আকারের বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
জি এম কাদের বলেন, ভারত থেকে আগাম সতর্কতা থাকলে ভালো হতো, যাতে আমরা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেতাম।
বাংলাদেশে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে এমন মন্তব্য করেন জি এম কাদের।
বদ্বীপ অঞ্চল বাংলাদেশ ও উজানে ভারতীয় অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে বেশ কিছু লোক মারা গেছে। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষয়টি বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটা বড় প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ত্রিপুরায় গোমতী নদীর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের কিছু অংশে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে যেসব খবর আসছে, সেগুলোকে গত বৃহস্পতিবার ভুল প্রতিবেদন হিসেবে দাবি করেছে ভারত।
নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই দেশের অভিন্ন নদীর বন্যা উভয় দেশের জন্য একটি অভিন্ন সমস্যা, যা উভয় দেশের মানুষকে প্রভাবিত করে। এই সমস্যার সমাধানে উভয় দেশের ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
জি এম কাদের বলেন, যারা পরিস্থিতি বোঝেন না এবং বর্তমান ভারতবিরোধী মনোভাব ব্যবহার করছেন, তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই পানি উচ্চতা থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হবে। যদি বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়া না হয়, তাহলে বাঁধগুলো ভেঙে যেতে পারে, বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ২০০টির বেশি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন নদী ৫৪টি।
ভারত বাংলাদেশের ‘সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু’ হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ভারতবিরোধী মনোভাব ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে। ক্ষোভ ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এখানে এখনো এমন মানুষ আছেন, যারা মানুষে মানুষে ভালো সম্পর্ক চান।
জি এম কাদের বলেন, কিন্তু সমস্যা হলো ভারত আওয়ামী লীগকে তার সব ত্রুটিবিচ্যুতি, দুঃশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব ও দুর্নীতি সত্ত্বেও এতটাই সমর্থন করেছিল যে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টকে এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর সেই কারণেই মানুষ ক্ষুব্ধ। সে জন্যই মানুষ ভারতকে বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে দেখছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। আমি মনে করি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ করা উচিত। এখানে তার বিচার করা উচিত। ভারতকে অবশ্যই তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জি এম কাদের বলেন, উভয় দেশের একে অপরকে প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন একটি নতুন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ এখন অতীত। আমাদের সামনে তাকাতে হবে। উভয় দেশকে বসতে হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যাহোক, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়কে সমান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এবং ভারতকে যেকোনো ধরনের বড়ভাইসুলভ মনোভাব এড়ানো উচিত। কারও সর্বোচ্চ প্রভুর মতো আচরণ করা উচিত নয়।
এনএইচ