ইরাক ও সিরিয়ায় ৮৫ লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধমূলক হামলা যুক্তরাষ্ট্রের
Share on:
ইরাক ও সিরিয়ায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত মিলিশিয়াদের ৮৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে সিরিয়া সীমান্তবর্তী জর্ডানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালাল। প্রাণঘাতী সেই হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জনেরও বেশি সেনা আহত হয়েছিলেন।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সিরিয়া এবং ইরাকে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে মিডিয়াতে আসা রিপোর্ট নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। জর্ডানের প্রত্যন্ত সেই মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের এটিই প্রথম প্রতিশোধমূলক কোনও হামলা।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বরাত দিয়ে আল জাজিরার রোজিল্যান্ড জর্ডান জানিয়েছেন, শুক্রবারের হামলায় ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সাতটি অবস্থানের এসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে বলে মার্কিন সামরিক সূত্র জানিয়েছে।
গত রোববার জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তের কাছে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হয়েছিলেন। পরে সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে একটি গ্রুপ।
রোজিল্যান্ড জর্ডান বলেছেন, ‘সেই হামলার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল যে, এর সামরিক জবাব দেওয়া হবে এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের মতো মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এই প্রতিক্রিয়া একাধিকভাবে হবে। সুতরাং পাল্টা এই হামলা খুব ভালোভাবে মার্কিন প্রতিক্রিয়ার প্রথম পর্যায় হতে পারে। মূলত সেই প্রতিশোধমূলক মার্কিন বিমান হামলাই এখন শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রথম পদক্ষেপ, আমি মনে করি না, প্রতিক্রিয়া এখানেই শেষ হবে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ অন্যান্য শীর্ষ মার্কিন নেতারা কয়েকদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা আঘাত হানবে। এসময় তারা স্পষ্ট করে দেন, প্রতিক্রিয়া কেবল একটি আঘাতে হবে না, সময়ের সাথে সাথে বেশ কয়েকটি ‘স্তরে প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরান-সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুগুলোতে প্রতিশোধমূলক হামলার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড এবং তাদের সমর্থনকারী মিলিশিয়াদের সাথে যুক্ত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে বলে চার মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন।
যদিও ইরানের অভ্যন্তরে কোনও অবস্থানকে লক্ষ্য করে হামলা করেনি যুক্তরাষ্ট্র, তারপরও গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের চার মাসের যুদ্ধের মধ্যে হওয়া এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, হামলায় কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন স্টোরেজ সুবিধা, সেইসাথে লজিস্টিক এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ চেইন সুবিধাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সাতটি অবস্থানে বিস্তৃত ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এই সাত স্থানের মধ্যে সিরিয়ার চারটি এবং ইরাকের স্থান তিনটি। এবং এই হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বি-১ বোমারু বিমানও ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার, সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বলেছে, সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে এবং সিরিয়া ও ইরাকি সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ‘আমেরিকান আগ্রাসনের’ ফলে অনেক লোক নিহত এবং আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের অগণিত সংখ্যক ঘাঁটি, অস্ত্রের গুদাম এবং প্রশিক্ষণ ডিপো রয়েছে। এই মিলিশিয়ারা ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের হাতে প্রশিক্ষিত, সজ্জিত। এছাড়া তারাই এগুলোর অর্থায়ন করে। কিন্তু তারা সবসময় আইআরজিসির মাধ্যমে পরিচালিত হয় না।
এছাড়া জর্ডানের সেই সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে একটি গ্রুপ।
মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে একত্রিতভাবে বোঝাতে এই নামটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে কিছু গোষ্ঠী আবার অপ্রত্যাশিত ভাবে এই অঞ্চলে সবার অভিন্ন শত্রু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে অতীতে লড়াইও করেছে।
এনএইচ