সরকার পালাবার পথ খুঁজে পাবে না : মির্জা ফখরুল
Share on:
এখন দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণের একটা রাষ্ট্র, পার্লামেন্ট, সমাজ তৈরি করার ব্যবস্থা করে দাও। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বড়-ছোট-মাঝারি দল- এটা বড় কথা নয়। আজকে দেশ ও দেশের মানুষ বিপদগ্রস্ত। দেশের অস্তিত্বকে রক্ষা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। তাই আসুন শান্তিপূর্ণভাবে আমরা রাজপথে নেমে পড়ি। যেখান থেকে উচ্চারিত কণ্ঠে বলব- এনাফ ইজ এনাফ; এক দফা দাবি- তুমি যাও। এখন দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণের একটা রাষ্ট্র, পার্লামেন্ট, সমাজ তৈরি করার ব্যবস্থা করে দাও। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। অতীতে স্বৈরাচারীরা কিন্তু পালাবার পথ খুঁজে পায়নি।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা’ শীর্ষক এ সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সত্যিকার অর্থে একটা শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ হোক- এটা আন্তরিকভাবে চাই। বিশ্বাস করি, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের এখনই সময়। আর একমুহূর্ত দেরি করা চলবে না। আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করতে না দেওয়ার সরকারের প্রতিহিংসার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক যুদ্ধে হেরে গেছে। আওয়ামী লীগ একটা ঘৃণিত দল। তারা দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে বিশ্বের কাছে ঘৃণিত। সারা পৃথিবী এখন সরকারের পদত্যাগ চায়। আমরাও পদত্যাগের জন্য একদফা নিয়ে লড়াই করছি।
জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, আমরাও চাই সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ বাতিল। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় দিতে হবে। সে হাঁটু গেড়ে বসবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। অভ্যুত্থানের মধ্য উৎখাত করতে হবে। সরিয়ে দিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রকে একদলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে একটা নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে। তারা শুধু জনগণের অধিকার হরণ করেছে তাই নয়, সম্পদ লুট করে এ দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে পুরো রাষ্ট্রকে তারা অস্তিত্বের দিক থেকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে ফয়জুল হাকি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ।
সরকারের কাছে গণতন্ত্র ও জনগণ কিছুই নিরাপদ নয়: এর আগে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে লালমাই বিএনপির আহত নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণ কিছুই নিরাপদ নয়। তারা (সরকার) সারা দেশে সন্ত্রাস করে, জনগণের ওপর অত্যাচার করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চায় কিন্তু জনগণ এবার তা রুখে দাঁড়াবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কুমিল্লার লালমাই থানার একটি বাসায় সাংগঠনিক সভা চলাকালে স্থানীয় মন্ত্রী-এমপির ভাইয়ের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এমনভাবে হামলা চালানো হয়েছে আহতরা বাঁচতে নাও পারত। এমনকি গুলিও চালানো হয়েছে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ কর্মী চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি সরকার এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে, মফস্বলে বাসায় বসে সভা করলেও সেখানে অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এগুলো করে তারা দেশকে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছে।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, ড্যাবের নেতা ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এবি