সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য নেই সমমনা ছাত্রসংগঠনগুলোর
Share on:
নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দাবি আদায়ে অর্ধশত দল যুগপৎ কর্মসূচি দিয়ে প্রায়ই রাজপথ উত্তপ্ত রাখছে। আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে এসব দলগুলোর সাথে প্রায়ই মতবিনিয় করে যাচ্ছে প্রধান নিয়ামক দল বিএনপি।
সরকার বিরোধী বা বড় আন্দোলনের সফলতা ব্যার্থতা নির্ভর করে ছাত্র সংগঠনের ভূমিকার উপর। কারণ তরুণ শক্তিই আন্দোলন ধরে রাখে এবং বিরোধী শক্তিতে দাবি মানতে বাধ্য করে।
তবে এবারের আন্দোলনে মূলদলগুলোর বাইরে একেবারেই দৃশ্যপটে নেই সমমনা দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্য। ২০০০-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন ছাত্রদল-শিবিরসহ সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতারা একসাথে রাজপথে অগ্রভাগে থাকলেও বিগত ১০ বছরে তাদের কোথাও বসতে দেখা যায়নি। সেই সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য না ভাঙলেও আজ তার কার্যকারিতা নেই।
২০০০ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মধ্যে বোঝাপড়া পরিষ্কার হওয়ায় আন্দোলন-কর্মসূচিতে রাজপথে সম্মিলিত ভূমিকা পালন করে ছাত্রঐক্যে। যার ফল পাওয়া যায় ভোটের মাঠেও। তরুণ ভোটারদের বড় অংশ চার দলীয় জোটকে ভোট দেয়।
ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, গত ছয় থেকে সাত মাস আগে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেন। তখন ছাত্রশিবিরকে বাইরে রেখে ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এবং ছাত্রঅধিকার পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশনসহ একাধিক ছাত্র সংগঠনের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন।
তবে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ছাত্রদলের প্রতি স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় ছাত্রঐক্য গঠনে পেছনের সারিতে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় এই ছাত্রসংগঠনটি। বিএনপি‘র নির্দেশনা পেলে ছাত্রদল বিষয়টি নিয়ে সমমনা ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নেবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেশ মুক্তির আন্দোলনে সবাইকে ভূমিকার রাখতে হবে। এজন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের গুরুত্ব আছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছি, উদ্যোগও নিয়েছি। এই কাজে যারাই এগিয়ে আসবে তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাবো।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল জানান, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। বিষয়টিতে কোনো অগ্রগতি হলে আপনাদের জানাবো।
ছাত্রশিবিরের একটি সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ছাত্রঐক্য কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন শিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। যদিও ছাত্রদল বিষয়টি নিয়ে না আগানোয় ওই উদ্যোগ আর কার্যকর হয়নি। ছাত্রদল একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। তাদেরকে সাথে নিয়েই সরকার বিরোধী ছাত্রঐক্যের সুফল আনতে হবে। ঐক্য চাইলে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাজিবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রঐক্য বাতিল হয়নি, এখনও আছে। এটাকে কার্যকর করা সময়ের অনিবার্য দাবি। চলমান আন্দোলনে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এটি কার্যকর করা গেলে আগামীর আন্দোলন আরো জোরদার হবে। আন্দোলনকে সামনে রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ছাত্রঐক্য আবারো দৃশ্যমান হবে বলেও প্রত্যাশা করেন শিবির সভাপতি।
বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল জানান, ২০০০-২০০১ সালে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য হয়েছিলো। এবারো সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এখনো চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে পারবেন। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিবিরের সাথে আমাদের আলোচনা হয়নি। তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগও নেই। আগামীতে তারা সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যে থাকবে কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
এদিকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউলের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠন হয়েছে।
এর প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন ও মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ। এই মোর্চার বৈঠকে ছাত্রদলের প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। তবে ছাত্রশিবিরের কাউকে দেখা যায়নি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এরপর থেকে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে একটি লাগাতার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর।
১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর জেহাদ নামে একজন ছাত্র পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হলে ২৪টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গড়ে উঠে "সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য"। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠনের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনের সকল শক্তি একই জায়গায় মিলিত হয়েছিল। তাদের দুর্বার আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে রুপ নেয়। সেই গণ অভ্যুত্থানে জেনারেল এরশাদ ৪ঠা ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং ৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ইতিহাসে তা ৯০'র আন্দোলন হিসেবে পরিচিত।
এনএইচ