tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৮ পিএম

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফের পর্যটন ব্যবসায় ধস


received_13740337176481092512_0

নির্বাচনের কারণে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারাদেশের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে গড়ে ৮০% পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।


তারা বলছেন, যদি জানুয়ারি মাসের পরেও হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকে, তাহলে ব্যবসার এই ধস থেকে সাময়িক উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটনের ভরা মৌসুমে হোটেল-মোটেলগুলো খালি পড়ে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের যে বুকিং ছিল সেগুলো সব বাতিল হয়ে গেছে। অগ্রিম বুকিংও নিতে আসছে না কেউ। শীতেই শুরুতে পর্যটকমুখর থাকে কক্সবাজার। কিন্তু এখন অবরোধের কারণে খালি।

কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, "সিজনের শুরুতেই আমরা হোঁচট খেলাম। আমাদের ২৫০টি রুমের মধ্যে গত চার থেকে পাঁচ দিন আগে ৩০ রুম ভাড়া ছিল। এখন হোটেল বলতে গেলে খালি।"

তিনি বলেন, "অবরোধ চলছেই, আমাদের সামনে কী হবে সেই চিন্তা করছি। যেগুলো বুকিং ছিল বাতিল হয়ে গেছে। কিছু কর্পোরেট বুকিং ছিল তারাও এখন আসতে চাচ্ছে না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আসবেন জানিয়েছেন।"

তিনি বলেন, "নতুন করে বুকিং হচ্ছে না। ডিসেম্বরে স্বাভাবিক সময় ৮০% অগ্রিম বুকিং হতো। অনেকে সরাসরি এসে হোটেল ভাড়া নিত। এই সময় গেস্টে পুরো ভরা থাকতো।"

অন্যদিকে রাঙামাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র সাজেক। এই দুই জেলায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। এই সময় যেখানে অগ্রিম বুকিং ছাড়া রুম ভাড়া পাওয়া যেত না। সেটা এখন নেই।

হোটেল হিল হ্যাভেন খাগড়াছড়ির ম্যানেজার বলেন, "নভেম্বর মাসের সব বুকিং ক্যানসেল হয়ে গেছে। প্রায় ৩০০ জনের বুকিং ছিলো। নতুন করে বুকিং নেয়ার জন্য কোন ফোন আসছে না।"

তিনি বলেন, "হোটেলটিতে ১২০ জনের ধারণ ক্ষমতা ২৭টি রুমে। আমাদের অবস্থা ভালো না, সাধারণত নভেম্বর মাসে গড়ে ১০-১৫ রুম ভাড়া হয়, সেখানে এখন এক-দুইটা রুমও ভাড়া হচ্ছে না। কর্পোরেট বুকিং থাকে এই সময়, সেটাও ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে।"

"গত বছর নভেম্বরে ৮০% বুকিং ছিল। তখন সাড়ে আট লাখ টাকা আয় হয়েছে। এবারও আশায় ছিলাম এমন হবে। কিন্তু আয় তো দূরের কথা, প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। জানি না কত দিন এভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকবে।"

এদিকে রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলের ম্যানেজার আল আমিন জানান, তাদের বুকিং ৩০% বাতিল হয়ে গিয়েছে। আর নতুন বুকিংও ৫০% কমে গেছে।

গাজীপুরের জয়দেবপুরের ছুটি রিসোর্টের হেড অব সেলস আবুল হোসেন আবির জানান, তাদের ৯৫% অগ্রিম বুকিং বাদ হয়ে গেছে। ধারণক্ষমতার মাত্র ৫% ভ্রমণকারী এখন আসছেন। যারা আসছেন, তারা সকালে এসে বিকালে চলে যাচ্ছে। রাতে কেউ থাকছেন না। নতুন করেও অগ্রিম বুকিং নেই।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, "এখন অবরোধ-হরতালের জন্য পর্যটক শূন্য। স্টাফদের বেতন দিতে পারছি না আমরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পরিবার নিয়ে কেউ ঘুরতে আসতে চায় না। নভেম্বর থেকে আমাদের পর্যটন মৌসুমের মাসটা শুরু হয়। এই মাস থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু। এই সিজনেই যদি আমরা ক্ষতিতে থাকি, তাহলে মৌসুম চলে গেলে এমতিতেই তো পর্যটক আসবে না।"

তিনি বলেন, "আমাদের এখানে ১৫০-২০০ হোটেল আছে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধ, পর্যটক আসবে কীভাবে! হরতাল-অবরোধ থাকলে কী পর্যটক আসতে পারে। এখন একেবারে খালি।"

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআরওএ) মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, "কক্সবাজারে আমার একটি হোটেল আছে । যেখানে ৪০০-৫০০ জন ধারণক্ষমতা। যতো বুকিং ছিল সব বাতিল হয়ে গেছে। নভেম্বর মৌসুমের প্রথম মাস। বছরে এই সময় দুই-তিন মাস আমরা ব্যবসা করার সুযোগ পাই। সেটা চলে যাচ্ছে । ডিসেম্বরে আমাদের ফুল বুকিং থাকার কথা সেটাও ক্যান্সেল হয়ে গেছে।"

তিনি বলেন, "১৮০ জন কর্মী আছে আমাদের। কর্মীদের খাবারের টাকা ঢাকা থেকে পাঠাতে হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের ব্যবসাকে ধসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের এই ক্ষতিপূরণ কে দিবে! আমরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, দ্রব্যমূ্ল্য বাড়াতে আমাদের খাবার তৈরির খরচ বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারিনি। এখন আবার রাজনেতিক সংকটে আমাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে।"

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, "আমরা এখন বিপর্যয়ের মধ্যে। আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা বছরে ৮টি মাস অপেক্ষা করি নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এই চারটি মাসের জন্য। পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই এই অবস্থা। আমাদের যে বুকিং ছিল সেগুলো বাতিল হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে কোনো বুকিং হচ্ছে না, পুরোপুরি বিপর্যয়।"

তিনি বলেন, "আমাদের ডমেস্টিক ট্যুরিজম বছরে এখন এক কোটির বেশি। ৭০%-৮০% ভ্রমণকারী মৌসুমের চার মাসে ঘুরে।"

তিনি বলেন, "এই সময় বেশি ভ্রমণের কারণ স্কুল, কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আবহাওয়াটাও ভ্রমণের জন্য উপযোগী থাকে। পাহাড়ি এলাকায় এই সময় ঘুরতে গেলে ভাল হয়। দেশের বাইরে বাংলাদেশি যারা আছে, তারাও অনেকে এই সময় বেছে নেয় দেশে বেড়াতে আসার জন্য।"

শিবলুল আজম কোরেশী জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে তার ১০০ জন ধারণক্ষমতার একটি হোটেল আছে; সেখানেও সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। প্রায় ৯০% এর উপর রুম খালি রয়েছে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা, রাতারগুল, বিছানাকান্দি , জাফলং-তামাবিল, রাঙামাটি, পতেঙ্গা বিচ এখন পর্যটকে ভরপুর থাকার কথা ছিল। এখন খালি পড়ে রয়েছে।

"সহিংসতার ভয়ে মানুষ ভ্রমণ করতে চাচ্ছে না। ভরা মৌসুমে একটানা পর্যটক শূন্যতার এ ক্ষতি কিভাবে কাটাবো আমরা?"

এমএইচ