ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে যেসব আলোচনা হতে পারে
Share on:
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে যাচ্ছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে সু-বাতাস বইছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি মার্কিন একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা ঘুরে যাওয়ার পরপরই দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে দুই দেশের শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোথায় নিতে চান, সহযোগিতার বিষয় চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারগুলো কী হতে পারে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২৫ বছর পরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০০ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন মার্কিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেই সময় দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই সময় ক্লিনটনের ঢাকা সফরের পেছনেও অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন ড. ইউনূস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান এবং কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না। সেখানে ইউনূসের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সম্মানের। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জো বাইডেনের মধ্যকার বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার এবং বিশ্ব ঢাকার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের বার্তা পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় ও পরিচিত এক মুখ। তার ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্যদূরীকরণ তত্ত্ব আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ভাষণ দিয়েছেন সিনেটসহ অনেক রাষ্ট্রের আইনসভায়। তবে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে সম্পূর্ণ নতুনরূপে হাজির হচ্ছেন বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এম হুমায়ূন কবির কালবেলাকে বলেন, একটা নতুন বাস্তবতার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া বাংলাদেশের নতুন সরকার প্রধান হিসেবে তিনি যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে স্ট্রং (শক্তিশালী) প্রতিনিধি আর হয় না। কারণ ড. ইউনূস নিজে সরকারপ্রধান এবং তিনি একজন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ। বিশ্বনেতাদের কাছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তার মুখ থেকে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শুনলে দেশের প্রেক্ষাপট, বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতে এটি কোথায় যাবে, তার একটা ধারণা সবাই পাবে।
ড. হুমায়ূন বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সাইডলাইনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কিছু বৈঠক হবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নতুন বাস্তবতায় বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হওয়াটা জরুরি ছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা যে বিভিন্ন সহযোগিতা পেতে পারি সে সম্ভাবনা ছাড়াও, বর্তমানে আঞ্চলিকভাবে আমরা কিছু প্রতিকূলতার মুখে আছি। সেইক্ষেত্রে আমার ধারণা বাইডেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আলোকে এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করতে পারেন। সেটি যদি হয় তাহলে এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে।
এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার ৫৭ সফরসঙ্গী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্যে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
এসএম